পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ò A R গল্পসংগ্ৰহ আহারের বর্ণনা করতে হলে দুখানি বড় বড় ক্যাটলগ তৈরী করতে হয়। এক খানি ফলের আর এখনি মিষ্টান্নের। সংক্ষেপে ভারতবর্ষের সকল ঋতুর ফল আর সকল প্রদেশের মিষ্টান্ন নীল-লোহিতের সুমুখে স্থূপীকৃত করে রাখা হল। তিনিও তাঁর এক সপ্তাহের ক্ষুধা মেটাতে প্ৰবৃত্ত হলেন। তিনি সেদিন আহারে স্বয়ং কুম্ভকৰ্ণকেও হারিয়ে দিতে পারতেন। তঁর আহার প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, এমন সময়ে ফটকে কে অতি আস্তে ঘা দিলে। গৃহকত্রী একটি দাসীকে নীচে গিয়ে দুয়োর খুলে দিতে আদেশ করলেন। মুহূর্তের মধ্যে একটি ভদ্রলোক এসে সেখানে উপস্থিত। নীল-লোহিত দেখেই বুঝতে পারলেন যে তিনি বম্বে অঞ্চলের একজন হোমরা-চোমরা ব্যক্তি। তিনি যে অগাধ ধনী, তা র্তার উদরেই প্ৰকাশ । ভদ্রলোক নীল-লোহিতকে দেখেই আঁতকে উঠে থমকে দাঁড়ালেন। তারপর সেই ভদ্রলোকটির সঙ্গে গৃহকত্রীর অনেকক্ষণ ধরে গুজরাটিতে কি কথাবার্তা হল। তারপর সেই ভদ্রলোকটি নীল-লোহিতকে সম্বোধন করে অতি অভদ্র হিন্দীতে বললেন যে, আহারান্তে তঁকে বাড়ী থেকে বেরিয়ে যেতে হবে, নচেৎ তিনি তঁকে পুলিসের হাতে সঁপে দেবেন। এ কথা শুনে স্ত্রীলোকটি বললেন যে, তা কখনই হতে পারে না। সমস্ত রাত পথে পথে ঘুরে বেড়ালে বাঙ্গালী ছোকরাটি প্লেগে মারা যাবে। আর ছোকরাটি যে চোর-ডাকাত নয়, তার প্রমাণ তার চেহারা-“এইস খপস্থরত” ছোকরা চোর-ডাকাত কখনই হতে পারে না। এ কথা শুনে ভদ্রলোকটি ভ্র কুঞ্চিত করলেন ; আবার দুজনে বাগবিতণ্ডী সুরু হল। শেষটায় উভয়ের মধ্যে এই আপোধ হল যে রাত্তিরে নীল-লোহিতকে চাকরীদের সঙ্গে থাকতে হবে, কিন্তু সকালে উঠেই তঁকে এ বাড়ী থেকে চলে যেতে হবে। ঘুমে নীললোহিতের চােখ বুজে আসছিল, তাই তিনি দ্বিরুক্তি না করে নীচে গিয়ে চাকরদের ঘরে শুয়ে পড়লেন। কিন্তু তিনি মনে মনে সঙ্কল্প করলেন যে, ঐ বোম্বেটের অপমানের প্রতিশোধ না নিয়ে তিনি দেশে ফিরবেন না। পরের দিন ঘুম থেকে উঠে নীল-লোহিত চােখ তাকিয়ে দেখেন যে, বেলা দশটা বেজে গিয়েছে। তিনি মুখ-হাত ধুয়ে, সবে গালে হাত