পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নীল-লোহিতের আদিগ্ৰেম কি কুক্ষণেই নীল-লোহিতের হামবড়ামির গল্প পাঁচজনের কাছে বলেছিলুম। তারপর থেকেই যাঁর সঙ্গে দেখা হয়, তিনিষ্ট আমার মুখে নীল-লোহিতের আর একটি গল্প শুনতে চান। সে গল্প বলা যে কত কঠিন, তা নীল-লোহিতের admirer-রা একবারও ভাবেন না। প্রথমত নীললোহিতের গল্প শুনেছি বহুকাল পূর্বে, এখন তা উদ্ধার করতে স্মৃতিশক্তির উপর বেজায় জবরদস্তি করতে হয়। কারণ নীল-লোহিতের বাজে কথা সব পলিটিক্স বা ধর্মের লাখ কথার এক কথা নয়, যা শোনালামাত্ৰ মনে গেথে যায়। আর কঁাটার মত বিধে থাকে। সুতরাং আমার বন্ধুবরের রূপকথার জন্য স্মৃতির ভাণ্ডারে হাতড়ে বেড়ােনর চাইতে গল্প নিজে বানিয়ে বলা ঢের সহজ। তবে গল্প যদি আমি বানিয়ে বলি, তাহলে তাতে কেউ কর্ণপাত করবেন না। কারণ সে গল্পের ভিতর বীররসও থাকবে না, মধুর-রসও থাকবে না। এর কারণ আমি বাঙালী। আমরা অবশ্য মরি, কিন্তু সে মৃত্যু ঘটে যুদ্ধক্ষেত্রে নয়, রোগশয্যায়; আর আমরাও ভালবাসায় পড়ি, কিন্তু সে শুধু নিজের স্ত্রীর সঙ্গে, সঙ্গদোষে বা গুণে। পরিণয় হচ্ছে আমাদের বাধ্যতামূলক প্রণয়শিক্ষার সনাতন ইস্কুল। আর সে স্ত্রীও আমাদের সংগ্ৰহ করতে হয় না, গুরুজনেরা সংগ্ৰহ করে দেন-কিঞ্চিৎ দক্ষিণাসমেত। অপরপক্ষে নীল-লোহিত ছিলেন বীররস ও আদিরসের অবতার। নাললোহিতের আত্মকাহিনী আগাগোড়া অলীক হলেও, তাঁর সকল কাহিনীর ভিতর একটা জিনিষ ফুটে উঠত—সে হচ্ছে তার মুক্ত আত্মা। আজ তঁার একটা ছোট্ট গল্প মনে পড়ছে, সেইটো আপনাদের কাছে বলতে চেষ্টা করব। আশা করি এর পর নীল-লোহিতের আর কোন গল্প * আপনারা শুনতে চাইবেন না। আজগুবি কথারও একটা সীমা আছে।