পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R Y 8 গল্পসংগ্ৰহ R সেদিন আমাদের সভায় আমাদের বন্ধু উদীয়মান কবি শ্ৰীভূষণ মন খুলে বক্তৃতা করছিলেন, আর আমরা পাঁচজনে নীরবে তঁর বক্তৃত৷ শুনছিলুম। সে বক্তৃতার বিষয় ছিল অবশ্য প্রেম। শ্ৰীভূষণ বক্ত ইংরেজ কবির কাব্য থেকে দেদার কোটোসানের সাহায্যে প্ৰমাণ করছিলেন যে, প্রেম বস্তুটি হচ্ছে মূলহীন ফুলের বিনিসূতাের মালা। শ্ৰীভূষণের ভাষার ভিতর এতটা প্ৰাণ ছিল যে, প্রেমনামক আকাশকুসুমের অশরীরী গন্ধে আমরা ঈষৎ মাতোয়ারা হয়ে উঠেছিলুম। একমাত্র মেডিকেল কলেজের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র অনিলচন্দ্রের মুখ দেখে মনে হল যে, শ্ৰীভূষণের কবিত্ব তীর অসহ্য হয়ে উঠেছে। শ্ৰীভূষণ থামবামাত্ৰই অনিল বলে উঠলেন যে—মানুষে যাকে প্রেম বলে, সে বস্তুটি একটি শারীরিক বিকার ছাড়া আর কিছুই নয় ; আর তা যে নয়, তা অনুবীক্ষণের সাহায্যে সকলকেই দেখিয়ে দেওয়া যায়। ওর বীজ আমাদের দেহের gland-এর মধ্যে প্রচ্ছন্ন থাকে। আর সেই জন্যই লোকের মনে কৈশোরেই প্রেম জন্মায়, তার পূর্বে নয় ; কারণ বালকের দেহে প্রেমের বাহন gland-এর সাক্ষাৎ পাওয়া যায় না । নীললোহিত শ্ৰীভূষণের কথা শুনে বিরক্ত হচ্ছিলেন, কিন্তু অনিলের কথা শুনে একেবারে চটে উঠে বললেন, “তোমাদের শাস্ত্রে বলে না কি যে, ছোট ছেলে প্ৰেমিক হতে পারে না ?--অথচ আমি যখন প্রথম প্রেমে পড়ি, তখন আমার বয়স কত জান ? সবে পাঁচ বৎসর।” অনিল বললেন, “কি ! পাঁচ বৎসর ?” নীল-লোহিত উত্তর করলেন, “তুমি যদি আমার বিলেতিদস্তুর জীবনচরিত লিখতে চাও, তাহলে বলি-তখন আমার বয়েস পাঁচ বৎসর, পাঁচ মাস, পাঁচ দিন। যদি জানতে চাও যে আমি ঠিক বয়েস জানলুম কি করে ? জানলুম এইজন্যে যে, যেদিন আমি প্রেমে পড়ি সেইদিন আমি মাকে গিয়ে আমার জন্মতিথি কবে, জিজ্ঞাসা করি। তিনি আমার – ঠিকুজীর সঙ্গে পাঁজিপুথি মিলিয়ে, আঁক কষে আমার ঠিক বয়েস বলে ब्लिन् ।”