পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সম্পাদক ও বন্ধু R8 VO পারে। লতিকাকে তার স্বামী কিছু লেখাপড়া শিখিয়েছিল, আর সেই সঙ্গে তাকে বুঝিয়েছিল যে, “সুরনাথ যা লিখেছে, তার চাইতে সে যা লেখেন, তার মূল্য ঢের বেশি।” অর্থাৎ আমি যদি আলসে না ততুম ত দশ ভলুমি হিস্টরি লিখতে পারতুম, আর না হয় তা পাঁচ ভলুম দর্শন। আমার ভিতর নাকি যে শক্তি ছিল, তার আমি সদ্ব্যবহার করিনি; এই কারণে সে মনে করে, আমিই হচ্ছি ওস্তাদ সাহিত্যিক। ফলে তার ছেলের সাহিত্যিক শিক্ষার ভার আমার উপরেই ন্যস্ত হয়েছে। আর এই ছেলেটির নাম অতুলানন্দ। আমি জানি সে কখন সাহিত্যিক হবে না, অন্তত আমার জাতের বাজে সাহিত্যিক হবে না। কারণ ছেলেটি হচ্ছে হুবহু সরোজের দ্বিতীয় সংস্করণ। সেই নাক, সেই চোখ, সেই মন, সেই প্ৰাণ ! এ ছোকরা কর্মক্ষেত্রে বড়লোক হতে পারে, কিন্তু কাব্যজগতে এর বিশেষ কোন স্থান নেই। সরোজের মত এরও মন বাঁধা ও সোজা পথ ছাড়া গলিঘুজিতে চলতে চায় না। এর চরিত্রে ও মনে, বেতালা বলে কোনও জিনিস নেই। আমার ভয় হয়। এই যে, এর মনের চন্দকে আমি শেষটা মুক্ত-ছন্দ না করে দিই। কারণ, তাহলে অতুল আর সে-মুক্তির তাল সামলাতে পারবে না। হাঁটা এক কথা, আর বঁাশবাজী করা আলাদা। কিন্তু অতুলকে এক ধাক্কায় সাহিতাজগৎ থেকে কর্মক্ষেত্রে নামিয়ে দেওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব। কারণ তা করতে গেলে লতিকার মত illusion ভেঙ্গে দিতে হবে, আর সঙ্গে সঙ্গে নিজের ঘরেও অশান্তির সৃষ্টি হবে। আমার স্ত্রী হচ্ছেন লতিকার বাল্যবন্ধু ও প্রিয়সখী। অতুলকে সরস্বতী ছেড়ে লক্ষীর সেল" করতে বললে আমাকে দু’বেল এই কথা শুনতে হবে যো-পরের জন্যে কিছু করা আমার ধাতে নেই। তাই নানাদিক ভেবেচিন্তে আমি তাকে কবিতা রচনায় লাগিয়ে দিলুম। জানতুম ও বাঁধা চন্দে, বাঁধি গাতে যা হয় একটা কিছু খাড়া করে তুলবে। এই হচ্ছে “পিয়া ও পাপিয়া”র জন্মকথা। এ কবিতা ছাপার অক্ষরে ওঠবার ফলে লতিকা ওকে পাঁচ-শ’ টাকা দিয়ে এক সেট সেক্সপিয়ার কিনে দিয়েছে। মনে ভেব না যে অতুলের মায়ের খাতিরে আমি তার মাথা খাচ্ছি। ও-ছেলের