পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*३@श মাথা কেউ খেতে পারবে না। অতুলের ভিতর কবিত্ব না থাক, মনুষ্যত্ব আছে, আর সে মনুষ্যত্বের পরিচয় ও জীবনের নানা ক্ষেত্রে দেবে। ও যখন জীবনে নিজের পথ খুঁজে পাবে, তখন কবিতা লেখবার বাজে সখ ওর মিটে যাবে। আর তখনও যদি ওর কলম চালাবার ঝোক থাকে তি আমি যা লিখিনি,-কেননা লিখতে পারিনি,-ও তাই লিখবে; অর্থাৎ হয় দশ ভলুম ইতিহাস, নয় পাঁচ ভলুম দৰ্শন। পদ্য লেখার মেহন্নতে ওর গদ্যের হাত তৈরি হবে। ওর অন্তরে যে কবিত্ব নেই, তার কারণ ওর বাপের অন্তরে তা ছিল না, ওর মা’র অন্তরেও তা নেই-অবশ্য কবিত্ব মানে যদি sentimentalism RN 1 এখন যে-কথা থেকে সুরু করেছিলুম, সেই কথায় ফিরে যাওয়া যাক। আমার প্রতি লতিকার এই অদ্ভুত শ্ৰদ্ধার মূলে কি আছে ? মনোভাবের রূপই বা কি, নামই বা কি ? একে ঠিক ভক্তিও বলা যায় না, গ্ৰীতিও বলা যায় না। সুতরাং এ হচ্ছে ভক্তি-ও-প্রীতিরূপ মনের দুটি সুপরিচিত মনোভাবের মাঝামাঝি Psychology-র একটি বঁকা রেখা । আর এ যদি ভক্তিমূলক গ্ৰীতি অথবা গ্ৰীতিমূলক ভক্তি হয়, তাহলেও সে ভক্তি-প্রীতি কোনও রক্তমাংসে গড়া ব্যক্তির প্রতি নয়, অর্থাৎ ও মনোভাব আমার প্রতি নয়, কিন্তু লতিকার মগ্ন-চৈতন্যে ধীরে ধীরে অলক্ষিতে যে কাল্পনিক সুরিনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় গড়ে উঠেছে, তারই প্ৰতি—অর্থাৎ একটা ছায়ার প্রতি, যে ছায়ার এ পৃথিবীতে কোন কায় নেই। আমি শুধু তার উপলক্ষ্য মাত্র। আমার অনেক সময়ে মনে হয় যে, তার মনে আমার প্রতি এই অমূলক ভক্তির মূলে আছে আমার প্রতি তার আত্মীয়স্বজনের সেকালের সেই অযথা অভক্তি। এ হচ্ছে সেই অপবাদের প্রতিবাদ মাত্র। এ প্ৰতিবাদ তার মনে তার অজ্ঞাতসারে আস্তে আস্তে গড়ে উঠেছে। দেখছি। এর ভিতর কোনও রোমান্স নেই, কেননা, এর ভিতর যা আছে, সে মনোভাব অস্পষ্ট-অতুলের মধ্যস্থতাই একমাত্র স্পষ্ট জিনিস।