পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূজার বলি २१ १ ছিল এই যে, আসবার আগে আপনার পায়ের ধূলো নিয়ে আসতে পারিনি। আপনি আমার প্রাণরক্ষার জন্য যে প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন, তা সত্য সত্যই অপূর্ব। আমি জানতুম যে, উকিল, ব্যারিস্টাররা মামলা লড়ে পয়সার জন্য, এবং তারা তাদের কর্তব্যটুকু সমাধা করেই খালাস --মামলার ফলাফল তাদের মনকে তেমন স্পর্শ করে না। এ ক্ষেত্রে পরিচয় পেলুম যে, মানুষ কেবলমাত্র তার কর্তব্যটুকু সেরেই নিশ্চিন্ত থাকতে পারে না। অনেক মামলা উকিলদের মনকেও পেয়ে বসে। আপনি আমাকে খালাস করবার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন, উপরন্থ আমার বিপদ আপনি নিজের বিপদ হিসেবেই গণ্য করেছিলেন। আমার সাজা হওয়ার ফলে আপনি যে মর্মান্তিক কষ্ট বোধ করেছিলেন, তা থেকে আমি বুঝলুম যে, আপনি আমার আপন ভাইয়ের মত আমার বিপদে ব্যথা বোধ করেছিলেন। এর ফলে আপনার স্মৃতি আমার মনে চিরকালের জন্য গাথা রয়ে গিয়েছে। আর একটা কথা, আসল ঘটনা কি ঘটেছিল, তা আপনার কাছে আমরা গোপন করেছিলুম। আজকে সব কথা খুলে বলছি। সে কথা শুনলেই বুঝতে পারবেন যে, ঘটনা যা ঘটেছিল, তা নিজের প্রাণরক্ষার জন্যও প্ৰকাশ করতে পারতুম না। আমার বরাবরই ইচ্ছে ছিল যে, সুযোগ পেলেই আপনাকে এ ঘটনার সত্য ইতিহাস জানান। একটি বাঙ্গালী ভদ্রলোকের এখানকার মেয়াদ ফুরিয়েছে। তিনি দু’দিন পরে দেশে ফিরে যাবেন। তার হাতেই এ চিঠি পাঠাচ্ছি। তিনি এ চিঠি আপনার হাতে দেবেন। আপনি জানেন যে, আমি যখন খুনী মামলার আসামী হই, তখন আমি প্রেসিডেন্সী কলেজে বি. এ. পড়তুম। শুধু পূজোর ছুটতে বাড়ী আসি। আমি পঞ্চমীর দিন রাত আটটায় বাড়ী পৌছই। বাড়ী গিয়েই প্ৰথমে বাবার সঙ্গে দেখা করি, তারপর বাড়ীর ভিতর মীর সঙ্গে দেখা করতে গেলুম। বন্ধুও আমার সঙ্গে মার কাছে গেল। বন্ধু কে জানেন ? সেই ছোকরাটি-যে আমার মামলার আগাগোড়া তদ্বির করছিল, আর যে দিবারাত্র আপনার কাছে থাকত, আপনাকে আমাদের w