পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহযাত্রী S সিতিকণ্ঠ সিংহঠাকুরের সঙ্গে আমার পরিচয় হয় রেলের গাড়ীতে। ঘণ্টা তিনেক মাত্র তিনি আমার সহযাত্রী ছিলেন। কিন্তু এই তিন ঘণ্টা আমার জীবনে এমন অপূর্ব তিন ঘণ্টা যে, তার স্মৃতি আমার মনে আজও জ্বল-জ্বল করছে। এক এক সময়ে মনে হয় যে, সিতিকণ্ঠ সিংহঠাকুরের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় আমার একটা কল্পনা মাত্র। আসলে তঁর সঙ্গে আমার কখনও সাক্ষাৎ হয়নি, কখনও কোনও কথাবাত হয়নি। সমস্ত ব্যাপারটি এতই অদ্ভুত যে, সেটিকে সত্যু ঘটনা বলে বিশ্বাস করবার পক্ষে আমার মনের ভিতরেই বাধা আছে । লোকে বলে, স্বপ্ন কখনও কখনও সত্য হয়, সম্ভবত এ ক্ষেত্রে সত্যু আমার কাছে স্বপ্ন হয়ে উঠেছে। এখন ঘটনা কি হয়েছিল, বলছি। বছর পাঁচ ছয় আগে আমি একদিন রাত দশটায় ঝাকা থেকে একখানি জরুরী টেলিগ্রাম পাই যে, সেখানে আমার জনৈক আত্মীয়ের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ, আর যদি আমি তাঁর মৃত্যুরু-পূর্বে তীর সঙ্গে দেখা করতে চাই, তাহলে সেই রাত্রেই আমার রওনা হওয়া প্রয়োজন। আমি আর তিলমাত্র বিলম্ব না করে একখানি ঠিক গাড়ীতে হাবড়ার দিকে ছুটিলুম। সেখানে গিয়ে শুনলুম যে, মিনিট পাঁচেক পরেই একখানি গাড়ী ছাড়বে—যাতে আমি ঝাঝা যেতে পারি। গাড়ীখানি অবশ্য slow passenger এবং ছাড়ে অসময়ে, তবুও দেখি ট্ৰেণ একেবারে ভর্তি, কোথাও ভাল করে বসবার স্থান নেই, শোবার স্থান ত দূরের কথা। খালি ছিল শুধু একটি ফাস্ট ক্লাস compartment । তাই আমি একখানি ফাস্ট ক্লাসের টিকিট কিনে সেই গাড়ীতেই চড়ে বসলুম। প্রথমে সে গাড়ীতে আমি একাই ছিলুম, মধ্যে কোন স্টেশনে মনে নেই, একটি বৃদ্ধ ইংরেজ ভদ্রলোক কামরায় এসে ঢুকলেন।