পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহযাত্রী RS পারে, বুঝতে পারলুম না। বুঝলুম যে, নিজের গাড়ীর লোকের চাইতে অপর গাড়ীর লোক সম্বন্ধে তীব্র ঔৎসুকা ঢের বেশি। কারণ, সীতারামপুরের পরে তিনি অনেকক্ষণ আমার সঙ্গে কথা কওয়া দূরে থাক, আমার প্রতি দৃকপাতও করেননি। তাঁর এ ব্যবহার দেখে আমি যে আশ্চৰ্য হয়েছি, তা তিনি লক্ষ্য করেছিলেন। কারণ, তিনি হঠাৎ বলে উঠলেন, “আপনি বোধ হয় জানতে চান যে, আমি পাশের চলন্ত ট্রেণে কি খুঁজছি ? আচ্ছা, আমি সংক্ষেপে বলছি, মন দিয়ে শুনুন " আমার নাম সিতিকণ্ঠ সিংহঠাকুর, জাতি ব্ৰাহ্মণ, পেশা জমিদার। আমার বাবার ছিল মস্ত জমিদারী ; উত্তরাধিকারিস্বত্ব আমি এখন তার মালিক। বাবা যখন মারা যান, আমি তখন নেহাত নাপালক। কাজেই কোর্ট অফ ওয়ার্ডস সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণের ভার নিলে, আর আমার শিক্ষক হলেন একজন ইংরাজ ভদ্রলোক। তিনি এককালে ছিলেন। কাপ্তেন। আমি কখনও স্কুল-কলেজে পড়িনি। আমি যা-কিছু শিখেছি, সে সবই তার কাছে। তিনি আমাকে কি শিখিয়েছেন জানেন ?--ঘোড়ায় চড়তে, বন্দুক ছুড়তে, ইংরাজীতে কথা কঠতে । এ তিন বিষয়ে বাঙ্গলার জমিদারের ছেলের মধ্যে আমি বোধ হয়, বোধহয় কেন, নিশ্চয়ই সর্বশ্রেষ্ঠ। আমার, ইংরাজী কথা তে আপনি শুনেছেন ? আর আমি যে কি রকম সওয়ার, তা জানে বাঙ্গলার পয়লা নম্বরের ঘোড়ারা। আর আমি একটা গণ্ডারকে পাঁচশ ফুট দূর থেকে এক গুলিতে ধরাশায়ী করতে পারি। আমার লক্ষ্য অব্যৰ্থ —আমার দ্বিতীয় শিক্ষক ছিলেন একজন ব্রাহ্মণ-পণ্ডিত। তিনি আমাকে শিখিয়েছেন সংস্কৃতভাষা, ধৰ্ম্মকথা, পূজাপাঠ, আর অন্ত্রমন্ত্র। জমিদারের ছেলের ধৰ্মজ্ঞান থাকা না কি নিতান্ত দরকার। তাই আমি একসঙ্গে ঘোর হিন্দু ও ঘোর সাহেব—একাধারে ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্ৰিয় | তবে এ বেশ কেন ? আমি গেরুয়া পারেছি। কাঞ্চনের অভাবে নয়, কামিনীর অভাবে। কথাটা শুনে বোধ হয় আপনি ভাবছেন যে, বড়