পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাপান খেলা এ গল্প আমার একটি বন্ধুর মুখে শোনা। বন্ধুবর আসলে ছিলেন মুন্সেফ, কিন্তু তার হওয়া উচিত ছিল ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। প্রথমত র্তার ছিল পূরে হাকিমী মেজাজ ; আর সেই কারণে তিনি পরতেন। ইংরাজী পোষাক, খেতেন। ইংরাজী খান, ফুকতেন আধ হাত লম্বা বর্ম চুরুট। উপরন্তু তীর বিশ্বাস ছিল যে, তিনি লেখেন নিতুল ইংরাজী, আর বলেন ইংরাজের মুখের ইংরাজী। কিন্তু মুনসেন্ধী আদালতে এই দুই বিষ্ঠের পরিচয় দেবার তেমন সুযোগ নেই-এই ছিল র্তার জীবনের প্রধান দুঃখ । রায় অবশ্য তঁকে ইংরাজীতেই শিখতে হত, কিন্তু বাকি খাজনার মামলার রায়ে তা আর শেকসপীয়র, মিলটন কোটি করা চলে না । কাজেই তিনি বাধ্য হয়ে আমাদের পাঁচজনের কাছে সাহিত্য আলোচনাচ্ছলে তঁর রিপ্তের দৌড় দেখাতেন। আমরা কিন্তু তাঁর কথাবার্তা শুনতে খুবই ভালবাসতুম। তিনি গল্প করতে যে পটু ছিলেন, শুধু তাই নয়, গল্প বলতেনও চমৎকার। চমৎকার বলছি। এই জন্যে যে, সে সব গল্পের বিষয়ও নতুন, বলবার কায়দাও অকেতাবী। সে গল্পগুলি ইংরাজী সাহিত্য থেকে চোরাই মাল নয়। তিনি মুন্সেফ না হয়ে ডেপুটি হলে যে একজন ছোটখাট বঙ্কিম হতেন, সে বিষয়ে আর কোন সন্দেহ নেই-অবশ্য যদি তার বাঙলা এমন পাঁচমিশেলী না হত । বঙ্কিমের বই পড়ে যেমন মনে হয় যে, বাঙলা ভাষা সংস্কৃত-বাপ-কি বেটা; বন্ধুবরের কথা শুনে বোঝা যেত যে, বাঙলা ছত্ৰিশ জাতের ভাষা। তার ভিতর মধ্যে মধ্যে এমন সব কথা থাকত-যাদের কোন অভিধানে সাক্ষাৎ পাওয়া যায় না, এমন কি, শ্ৰীযুক্ত রাজশেখর বসু ওরফে পরশুরামের সদ্যঃপ্রকাশিত “চলন্তিকা”তেও নয়। এ হেন পৈতে ফেলা ভাষা। ভদ্র সমাজে নিত্য শোনা যায় না।