পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঝাপান খেলা २१& হত, এবার মরে চীন দেশে জন্মাব। এ সব দিনের কথা এখন মনে করতে হাসি পায়। কিন্তু আমার পৃথিবীর সঙ্গে তখন প্রথম পরিচয়, যা দেখতুম, আর যা শুনতুম, সবই অপূর্ব ঠেকত। c আমি ছিলুম তার favourite । বীরবল বলত, সে আমাকে তার সব বিষ্ঠে শেখাবে-অবশ্য বড় হলে। আমার অবশ্য তার কোণ বিদ্যেই শেখবার লোভ ছিল না, লোভ ছিল শুধু সে সব দেখবার। তাই সে আমাকে একদিন বলেছিল যে, সে আর তার ভাইব্রাদারীতে মিলে রাত্ৰিতে কাঁপান খেলবে। আমি যদি দেখতে চাই তি রাত দুপুরে একা তার বাড়ী গেলেই সব দেখতে পাব। অবশ্য বাবা মা আমাকে অত রাত্তিরে বীরবলের বাড়া একা যেতে দেবেন না, তা আমি জানতুম ; তাই যদিও কঁপান খেলা দেখবার আমার অত্যন্ত লোভ ছিল, তবুও বীরবলের প্রস্তাবে রাজী হতে পারলুম না। ঝাপান খেলা ব্যাপারটা কি জানেন ?--আমাদের দেশে কেওড়া, মেথর, হাড়ি, ডোমরা বছরে একদিন সাপ খেলে-সাপের বিষদাঁত না ভেঙ্গে। সেই দিনই কে কেমন সাপুড়ে, তার পরীক্ষা হয়, আর সঙ্গে সঙ্গে রোজাদের। ঝাঁপান যেখানে খেলা হয়, সেখানেই এক আধজন মারা যায়। হাজার ওস্তাদ হোক, আস্ত জাত সাপ নিয়ে খেলা ত ছেলেখেলা নয়! ঐ বিষদাঁত ছুলেই মরণ, যদি না রোজা ঝেড়ে সে বিষ নামাতে পারে। পুলিস এ খেলা খেলতে দেয় না, তাই গুণীর দল রাত দুপুরে ঘরে দুয়োর দিয়ে এ খেলা খেলে। যেদিন বেহুলা ঈস্ট্রের সভায় নেচে লখিন্দরকে বাঁচিয়েছিল, সেইদিনই এ খেলা খেলতে হয়। বীরবল অবশ্য ব্যবসাদার সাপুড়ে ছিল না। কিন্তু যে কার্যে বিপদ আছে, বীরবল হাসিমুখে গিয়ে তার মধ্যে কঁপিয়ে পড়ত। আর শুনেছি, সে সাপ খেলাতেও চমৎকার। সাপ যেদিক থেকে যে ভাবেই ছোবল মারুক না কেন, বীরবলের অঙ্গ কখনও ষ্টুতে পারে নি।