পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দিদিমার গল্প ( , ) এ গল্প আমি শুনেছি। আমার সহপাঠী ও বাল্যবন্ধু নীলাম্বর মজুমদারের কাছে । তিনি শুনেছিলেন তঁর দিদিমার কাছে । নীলাম্বরের বয়স যখন দশ, তখন তঁর দিদিমার বয়স সত্তর, আর এই সময়ই দিদিমা নীলাম্বরকে এই গল্পটি বলেন। গল্পের ঘটনা যে সত্য, তার প্রমাণ নীলাম্বরের দিদিমা ছিলেন নিরক্ষর, অতএব কোন বই থেকে তিনি এ গল্প সংগ্ৰহ করেননি। আর রামায়ণ মহাভারত ছাড়া অন্য বিষয়ে ছেলেদের গল্প বলা সেকালে মেয়েদের অভ্যাস ছিল না। তবে যদি কোনও বিশেষ ঘটনা তাদের মনে গাঢ় ছাপ রেখে যেত,-এমন যদি কিছু ঘটত যা তঁরা কিছুতেই ভুলতে পারতেন না, তাহলে কখনও কখনও সে কথা ছেলেদের বলতেন। এরকম ঘটনা একালে বোধ হয় ঘটে না । কিন্তু আজ থেকে একশ বছর আগে বাঙ্গালী সমাজে ঘটা অসম্ভব ছিল না। কি ধর্মের, কি অধর্মের, সেকেলে জোর একালে নেই। নীলাম্বরদের গ্রামে একটি প্ৰকাণ্ড ভিটে পড়ে ছিল, তার অধিকাংশই জঙ্গলে ভর, আর একপাশে ছিল মস্ত একটি দীঘি। নীলাম্বর জানত যে তাদের মজুমদার বংশেরই একটি উচ্ছন্ন পরিবারের বাস্তুভিটের এগুলি ধবংসাবশেষ । এককালে নাকি ধনেজনে তারাই ছিল গ্রামের ভিতর সর্বাপেক্ষা সমৃদ্ধ। বাড়ীর বুড়ে চাকরদের কাছে শিশুকাল হতে নিলাম্বর এই পরিবারের ঐশ্বর্য ও পূজাপার্বণ ক্রিয়াকর্মের জাকজমক ধুমধামের কথা শুনে এসেছে। কি কারণে তাদের এমন দুৰ্দশা ঘটল ও বংশলোপ হল, তা জানিবার জন্য নীলাম্বরের মহা-কৌতুহল ছিল । সে একদিন তার দিদিমাকে এ বিষয় জিজ্ঞাসা করায় তিনি বললেন, “এ হচ্ছে ধর্মের শাস্তির ফল।” নীলাম্বর বললে, “ব্যাপার কি হয়েছিল বল।”