পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দিদিমার গল্প Rre ( 8 ) তার উপর তিনি ছিলেন মহা দুশ্চরিত্র। ভৈরবনারায়ণের দৌরাত্মো গোরস্তর ঝি-বীেদের ধর্ম রক্ষা করা একরকম অসম্ভব হয়ে পড়েছিল,- অবশ্য তাদের দেহে যদি চোখ পড়বার মত রূপ থাকত। আর কামারকুমোর জেলেকৈবর্তদের মেয়েদের গায়ে রঙ না থাক, কখনও কখনও খাসা রূপ থাকে। তিনি কোথায় কার ঘরে সুন্দরী স্ত্রীলোক আছে দিবারাত্র তার সন্ধান নিজে করতেন। আর অপরকে দিয়ে খোজ করাতেন, এবং চলে-বলে-কৌশলে তাকে হস্তগত করতেন। এ বিষয়ে পণ্ডিতমহাশয়ই ছিলেন তীর একসঙ্গে দূত আর মন্ত্রী। বাপের একমাত্র সন্তান, ছেলেবেলা থেকে যা-খুসি-তাই করেছেন, কেননা তার যথেচ্ছাচারিতায় বাধা দেবার কেউ ছিল না ; তারপর দেহে যখন যৌবন এসে জুটল, তখন ভৈরবনারায়ণ হয়ে উঠলেন একটি ঘোর পাষণ্ড । ছেলের চরিত্রের পরিচয় পেয়ে ভৈরবনারায়ণের মা অত্যন্ত ভাত হয়ে পড়লেন এই ভেবে যে, ছেলের কখন কি বিপদ ঘটে। কিন্তু পণ্ডিতমহাশয় তঁকে বোঝালেন যে, বনেদি ঘরের ছেলেদের এ বয়সে ওরকম ভোগভৃষ্ণ হয়েই থাকে, পরে সে আবার ধীর, শান্ত ও ঋষিতুল্য ধাৰ্মিক হয়ে উঠবে ; যৌবনের চাঞ্চল্য যৌবনের সঙ্গেই চলে যাবে। তিনি কিন্তু এ কথায় বড় বেশি ভরসা পেলেন না, তাই খুঁজেপেতে একটি বছর চৌদ্দ বয়সের ফিটু গৌরবর্ণ মেয়ের সঙ্গে ছেলের বিয়ে দিলেন। মহালক্ষনীর রূপের ভিতর ছিল রঙ । ছোটখাট মানুষটি, নাক্তচাপ, চোখ দুটি বড় বড়, কিন্তু রক্তমাংসের নয়-কঁচের। তিনি ছিলেন গোসাইয়ের মেয়ে, জমিদারের নয়, নিতান্ত ভােলমানুষ-যেন কাঠের পুতুল। আর তীর ভিতরটা ছিল কাঠের মতই অসাড়। ( ( ) এরকম স্ত্রীলোক দুৰ্দান্ত স্বামীকে পোষ মানাতে পারে না, বরং নিরীহ স্বামীকেই বিগড়ে দেয়। বিয়ের পর কিছুদিনের জন্য ভৈরবনারায়ণের পর্যন্ত্রীহরণ রোগের কিছু উপশম হয়েছিল । তাঁর মা মনে