পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অবনীভূষণের সাধনা ও সিদ্ধি o S এমন কি কোনও মনগড় সুন্দরীর সঙ্গে তিনি একদিনের জন্যও লাভ পড়েননি। কিসে দেশের অসংখ্য নিরক্ষর, নিঃসহায়, রোগক্লিষ্ট লোকদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের বিধান করা যায়, এই ছিল তার প্রধান এবং একমাত্ৰ ভাবনা। অতএব এ ভাবনায় যে তিনি সিদ্ধিলাভ করবেন, তা নিঃসন্দেহ। এই সব কারণে আমি আন্দাজ করেছিলুম যে, অবনীভূষণ একদিন বাঙ্গালার জমিদারদের মুখোজ্জল করবেন। অবনীর একটি প্রধান গুণ ছিল তঁার একাগ্ৰতা । উপরন্তু ইচ্ছা কামে পরিণত করবারও তার যথেষ্ট সুযোগ ছিল। আমাদের পাঁচজনের মত র্তার পেটে কিঞ্চিৎ বিদ্যা ছিল, পরোপকার করবার বাসনা ছিল, তার উপর তঁর ছিল অর্থসামর্থ্য-যা আমাদের পাঁচজনের ছিল না। আর তার পারিপারিক সঞ্চিত অর্থ তিনি যে আমোদ-আহলাদে অপব্যয় করবেন না- সে বিষয়ে র্তার বন্ধুবান্ধবরা নিশ্চিন্ত ছিলেন। অবশ্য আমরা অনেকেই নানারূপ শুভ সংকল্প নিয়ে কলেজ থেকে বেরই, কিন্তু জীবনে সে সংকল্প কার্যে পরিণত করতে পারিন । সামাজিক জীবনকে আমাদের মনোমত পরিবর্তন করা যে আমাদের পক্ষে অসাধ্য না হোক দুঃসাধ্য-দুদিনেই তা বুঝতে পারি বলে আমাদের কর্মজীবনকে সামাজিক জীবনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতেই ব্ৰত ইষ্ট । আর যিনি যতটা খাপ খাওয়াতে কৃতকাৰ্য হন, তিনিই ততটা কৃতি?? লাভ করেন। দুঃখের বিষয় অবনীভূষণ সামাজিক জীবনের স্রোত উজনি বহীতে পারেননি—শুধু তাই নয়, নিজের জীবনকে অদ্ভুত ট্রাজেডিতে পরিণত করেছিলেন। কি কারণে, সেই কথাটা আজ বলব। t ག༦༨ কলেজের যুগটা পার হলেই আমরা পাঁচজনে নানাস্থানে নানাদেশে ছড়িয়ে পড়ি; কৰ্মজীবনই আমাদের পরস্পরকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এম. এ. পাশ করবার পর অবনীভূষণ স্বস্তানে ফিরে গেলেন, আর আমি গেলুম পশ্চিমের এক সহরে স্কুলমাস্টারী করতে। বছর তিনেক