পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\93 R গল্পসংগ্ৰহ 8 আমি চলে আসবার পর অবনীভূষণের স্কুল ও ডাক্তারখানা খোলা হল এবং ভালভাবেই চলতে লাগল, প্যারীলালের তত্ত্বাবধানে। অবনীভূষণের বিশ্বাস ছিল যে, তাঁর বন্ধুর শিক্ষা ও চিকিৎসা সম্বন্ধে ঢের নতুন নতুন idea আছে, যা তিনি ইতিপূর্বে ছাত্রদের ও রোগীদের উপকারার্থে পরের স্কুল-কলেজে ডাক্তারখানায় প্রয়োগ করবার সুযোগ পাননি। তিনি ডাক্তার ও মাস্টারদের শিক্ষার ভার নিজের হাতে নিলেন। প্যারীলাল ডাক্তারদের শিক্ষাশাস্ত্ৰ সম্বন্ধে ও মাস্টারদের চিকিৎসাশাস্ত্ৰ সম্বন্ধে উপদেশ দিতে সুরু করলেন, কারণ তঁর মতে দেহ বাদ দিয়ে মানুষের মন গড়া যায় না, আর মন বাদ দিয়েও তার দেহ গড়া যায় না। এসব উপদেশ, কি ডাক্তারবাবুদের কি মাস্টারবাবুদের কারও বিরক্তিকর হয়নি, কেননা তীর মুখের কথা ছিল একরকম বশীকরণ মন্ত্র। বুদ্ধির এরকম বিচিত্র এবং অদ্ভুত খেলা তঁরা পূর্বে আর কখনও দেখেননি। বছরখানেক না যেতেই অবনীভূষণ বিবাহ করলেন। অবনীভূষণের স্ত্রী ছিলেন যেমন সুন্দরী, তেমনি ভাল মেয়ে। বিবাহের পরেই অবনীভূষণের জীবনের কেন্দ্র হয়ে উঠল, তাঁর স্ত্রী। পৃথিবীতে স্ত্রীজাতি যে একরকম অপূর্ব জীব, এবং তাদের ভিতর যে একটা বিশ্বজোড়া রহস্য আছে,-অবনীভূষণ তীর স্ত্রীর সংসর্গে এসে এই সত্যটি প্রথমে আবিষ্কার করলেন। ক্রমে তিনি তাকে মনে মনে একটি দেবতা করে তুললেন। এই প্রতিমার নিত্যপূজা উপাসনা ধ্যানধারণাই হল তঁর জীবনের নিত্যকর্ম। বলা বাহুল্য, তার স্কুল ও ডাক্তারখানার ভার তিনি সম্পূর্ণ ডাক্তার ও মাস্টারদের হাতে ন্যস্ত করলেন ; এবং তিনি তঁর স্ত্রীর শিক্ষা ও রূপের অনুশীলনেই ভঁর সকল মনপ্ৰাণ নিয়োজিত করলেন। লোকে বলতে আরম্ভ করলে যে, তিনি ঘোর স্ত্রৈণ হয়ে পড়েছেন; কারণ তিনি কারও সঙ্গে আর মেলামেশা করতেন না। যে লোক শৈশবে মাতৃপিতৃহীন হয়েছিলেন এবং জন্মাবধি একমাত্র চাকরিবােকর, আমলাফয়লা, মাস্টার ও ডাক্তারের