পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অবনীভূষণের সাধনা ও সিদ্ধি \ হাতে লালিতপালিত হয়েছেন, তার অন্তরে একটি রক্তমাংসের মানুষের রক্তমাংসের ভালবাসার বুভুক্ষা প্রচণ্ডভাবে দেখা দিল। এ তো হবারই কথা। তঁার একমাত্র বন্ধু প্যারীলাল ইতিমধ্যেই অন্তৰ্ধান হয়েছিলেন। বােধ হয় আবার কোন নূতন বিদ্যা শিখতে কোন নূতন গুরুর সন্ধানে তিনি বেরিয়ে পড়েছিলেন। 6 অবনীভূষণের দেহ ও মনে তঁর স্ত্রীর প্রতি আসক্তি একটা দমকা জুরের মত এসে পড়েছিল। বছরখানেক পর সে জুর আস্তে আস্তে চাড়তে আরম্ভ করলে। তাঁর দুকুল-ছাপান প্রেমের জোয়ারে যখন ভঁটি ধরতে আরম্ভ করলে, তখন প্যারীলালের একটা পুরোনো কথা র্তার মনে পড়ে গেল। প্যারীলাল একদিন তঁাকে বলেছিলেন যে, “নিত্যপূজা হচ্ছে ধর্মমনােভাবের প্রধান শত্রু। কারণ নিত্যপূজাটা ক্রমে একটা শারীরিক অভ্যাসের মধ্যে দাড়িয়ে যায়, আর তখন মন ধর্ম থেকে অলক্ষিতে সরে যায়, আর লোকে ঐ অভ্যাসটাকেই ধর্ম বলে ভুল করে। অবনীভূষণ কথাটাকে প্রথমে রসিকতা বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন আবিষ্কার করলেন যে, প্যারীলালের কথাটা সম্পূর্ণ সত্য। তঁর মনে হল যে, তার স্ত্রী-দেবতার পূজা ব্যাপারটা ক্রমে প্রেমের একটা মন্ত্রপড়া ও ঘণ্টানাড়ার ব্যাপারে পরিণত হচ্ছে, আর তিনি তঁর আসল কর্তব্যগুলি উপেক্ষা করছেন। স্কুল ও হাসপাতালের উন্নতিকল্পে তিনি শুধু টাকা দিচ্ছেন, মন দিচ্ছেন না । আর টাকা যে দিচ্ছেন, সে শুধু অনায়াসে তা দিতে পারেন বলে। আর এ অর্থও তার স্বেপার্জিত নয়--উত্তরাধিকারসূত্রে পূর্বপুরুষের নিকট প্রাপ্ত। প্যারীলাল তঁকে বলে গিয়েছিলেন, “দেখো যেন ঐ কর্তব্য থেকে কখনও ভ্ৰষ্ট হয়ে না।” প্যারীলাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করবার প্রস্তাব শুনে প্ৰথমে হেসে বলেছিলেন যে,-“অবনীভূষণ, তুমি যা করতে চাও সে বস্তু কি, জান ? লাঙল ঠেলবার যন্ত্রকে কলম ঠেলবার যন্ত্রে পরিণত করবার কারখানা। কিন্তু এ কারখানা খুলতে তুমি যখন 8s