পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পসংগ্ৰহ ܪܘ܂ —“আমি যদি আলেয়া হই! তাহলে তুমি একদিন অন্ধকারে দিশেহারা হয়ে শুধু কেঁদে বেড়াবে।” আমার মনে এ কথার কোনও উত্তর জোগাল না। আমি নীরব হয়ে গেলুম দেখে সে বললে—“তোমার মুখে এমন-একটি সরলতার চেহারা আছে যে, আমি বুঝতে পাচ্ছি। তুমি এই মুহূর্তে তোমার মনের কথাই বলছি। সেই জন্যই আমি তোমার জীবন আমার সঙ্গে জড়াতে চাইনে। তাতে শুধু কষ্ট পাবে। যে কষ্ট আমি বহু লোককে দিয়েছি, সে কষ্ট আমি তোমাকে দিতে চাইনে ;-প্রথমতঃ তুমি বিদেশী, তারপর তুমি নিতান্ত অর্বাচীন।” এতক্ষণে আমরা Oxford Circus-এ এসে পৌছলুম। আমি একটু উত্তেজিত ভাবে বললুম-“আমি নিজের মন দিয়ে জনছি যে, তোমাকে হারানোর চাইতে আমার পক্ষে আর কিছু বেশী কষ্ট হতে পারে না। সুতরাং তুমি যদি আমাকে কষ্ট না দিতে চাও, তাহলে বল আবার কাবে আমার সঙ্গে দেখা করবে। ” সম্ভবতঃ আমার কথার ভিতর এমন একটা কাতরতা ছিল, যা তার মনকে স্পর্শ করলে। তার চােখের দিকে চেয়ে বুঝলুম যে, তার মনে আমার প্রতি একটু মায়া জন্মেছে। সে বল্লে—“আচ্ছা তোমার কার্ড দাও, আমি তোমাকে চিঠি লিখব।” । আমি অমনি আমার পকেট-কেস থেকে একখানি কার্ড বার করে তার হাতে দিলুম। তারপর আমি তার কার্ড চাইলে সে উত্তর দিলে“সঙ্গে নেই।” আমি তার নাম জািনবার জন্য অনেক পীড়াপীড়ি করলুম, সে কিছুতেই বলতে রাজি হল না। শেষটা অনেক কাকুতি-মিনতি করবার পর বললে—“তোমার একখানি কার্ড দাও, তার গায়ে লিখে দিচ্ছি ; কিন্তু তোমার কথা দিতে হবে সাড়ে-ছটার আগে তুমি তা দেখবে না ।” তখন ছটা বেজে বিশ মিনিট । আমি দশ মিনিট ধৈৰ্য ধরে থাকতে প্রতিশ্রুত হলুম। সে তখন আমার পকেট-কেসটি আমার হাত থেকে নিয়ে, আমার দিকে পিঠ ফিরিয়ে, একখানি কার্ড বার করে তার উপর