পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

✓»ዓቆ *iż{Röදී ঘোষাল, তোর গল্প বন্ধ কর, নইলে কত যে মিথ্যে কথা বানিয়ে বলবি তার আর আদি অন্ত নেই। আজ তোর ঘাড়ে রসিকতার নয়, মিথ্যে কথার ভূত চেপেছে, বঁটা দিয়ে না। ঝাড়লে তা নামবে না। --হুজুর, আমার একটি কথাও মিছে নয়। ভৈরবী না হলে কি গোরস্তর বি-বউ লাল শাড়ী পরে, লাল দোপাট্ট ওড়ে, কাছ কেঁচা দেয়, মাথার চুল চুড়া করে বাঁধে, এক কপাল সিঁদুর লেপে —হােক না। ভৈরবী, তাতেই তুই বাঁচিন্স কি করে ? ভৈরবীর আবার প্ৰেম কিরে ? --হুজুর এতক্ষণই যদি ধৈর্য ধরে থাকলেন, তবে আর একটু থাকুন। গল্পের শেষটা শুনলে আপনি নিশ্চয় খুসি হবেন। শুনুন :- ঐ ভৈােবরীটি আর কেউ নয়, ঐ ব্রাহ্মণের ছেলেরই স্ত্রী। ভদ্রলোক দশ বৎসর নিরুদেশ হয়েছিল। দেশের লোক বললে তার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু পতিপ্ৰাণ রমণী সে কথায় বিশ্বোস করলে না । “আমার সিথের সিঁদুরের যদি জোর থাকে, তবে আমার হাতের লোহা নিশ্চয়ই ক্ষয় যাবে। আমি দিব্যচক্ষে দেখতে পাচ্ছি, আমার স্বামী হয়েছেন স্বামীজি।” এই বলে সে স্বামীর সন্ধানে ভৈরবী সেজে বেরিয়ে পড়ল। ভগবানের ইচ্ছায় এই পুণ্যস্থানে দুজনের আবার মিলন হল। স্ত্রী স্বামীকে দেখামাত্রই চিনতে পেরেছিল, কারণ এই দশ বৎসর শয়নে স্বপনে সে ঐ মূর্তিই ধ্যান করেছিল। কিন্তু স্বামী তাকে চিনতে পারেনি দেখে সে স্বামীকে একটু খেলিয়ে সন্ন্যাসের ঘোলাজল থেকে গাহাঁস্থ্যের শুকনাে ডাঙ্গায় তোলবার মতলবে এতক্ষণ জড়সড় হয়ে ও মুড়িসুড়ি দিয়ে ছিল । তারপরে যখন সে ।চাদরখানি মাথা থেকে ফেলে দিয়ে সটান এসে স্বামীর সুমুখে দাঁড়াল, তখন ব্ৰাহ্মণসন্তান বুঝতে পারল “এই সেই”; অমনি সেই বৈদান্তিক-শাক্ত “তত্ত্বমসি” বলে ছুটে তাকে আলিঙ্গন করতে গিয়ে হাতের মধ্যে কিছু পেলে না, শুধু দেওয়ালে তার মাধ্যা সুকে গেল। সঙ্গে সঙ্গে একটা দমকা হাওয়ায় মন্দিরের দুয়োর খুলে গেল, আর তার ভিতরে ভোরের আলোয় দেখা গেল মন্দির একেবারে শূন্য!