পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘোষালের হেঁয়ালি ww. -আচ্ছা যাচ্ছি। তোমার রায় কি ? ও রসিকতাটা না করলেই ভাল হত। প্রফেসরের যে অজীর্ণ বিদ্যায় মাথা ঘুরে গেছে তা আমরা সকলেই জানি---এমন কি মীনারাণীও । তার মত-তোমার কথা সত্যও হতে পারে, রসিকতাও হতে পারে। কিন্তু তুমি ওকথা বলে ভালই করেছ। মানুষের ধৈর্যেরাও ত একটা সীমা আছে। এখন ঠাকুরাণীর মত কি, তা তুমি তার কাছে গেলেই শুনতে পাবে। আমি জানিনে । আমি “আচ্ছা” বলে আবার ঠাকুরবাড়ীতে ফিরে গেলুম, কারণ শুনলুম, তিনি সেখানে আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। ঠাকুরাণী আমাকে আসন গ্ৰহণ করতে অনুমতি দিয়ে ধীরে শান্তভাবে বললেনঃ “আমার বিশ্বাস তুমি সত্য কথা বলেছ, কেননা তুমি যে কৃতবিদ্য, তা প্ৰত্যক্ষ । ছদ্মবেশ গায়ে যত সহজে পরা যায়, মনে তত সহজে নয়। মন জিনিসটে হাজার ঢাকতে চাইলেও যখন তখন বেরিয়ে পড়ে। “তুমি বোধ হয় জান যে, মীনা আমার আত্মীয়। যখন দেখলুম যে বিপত্নীক রায়মশায়ের তৃতীয় পক্ষ করতে আর ত্বর সয় না, আর বাল্যবিবাহেও তার আপত্তি নেই, বিধবাবিবাহেও নয়-তখন বালাবিধবাবিবাহরূপ যুগপৎ অধৰ্ম্ম থেকে তাঁকে রক্ষা করবার জন্য মীনাকে র্তার হস্তে সমর্পণ করলুম। এ কাজ ভাল করেছি। কিনা জানিনে। সনাতন ধর্মের বিধি-নিষেধ সকলের পক্ষে ভাল হতে পারে, কিন্তু প্ৰত্যেকের পক্ষে নয়। কোন কোন রমণীর স্বধৰ্ম হচ্ছে ফুটে ওঠা, আর শাস্ত্রের ধর্ম হচ্ছে তাকে ফুটতে না দেওয়া। তাতেই এজাতীয় স্ত্রীলোকের জীবন হয়। প্ৰাণহীন শরীরাধারণ মাত্র। একথা অবশ্য ভূঙ্গেশ্বর বোঝে না। কারণ সে জীবনের মূলও জানে না, ফুলও জানে না। তার বিদ্যে হচ্ছে জীবনের ভাষা ভুলে তার বানান শেখা। সে যাই হােক, তোমায় আজ শেষ রাত্তিরেই এখান থেকে চলে যেতে হবে। কাল সকালে যেন কেউ তোমার দেখা না পায় । এতে তোমারও মর্যাদা রক্ষা হবে, ভূঙ্গেশ্বরেরও শিক্ষা হবে। “রায়মশায় তােমার ছ’ মাসের ছুটি মঞ্জুর করেছেন ; পূরে o