পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঝোট্টন ও লোটুন 38) (8) তারপর সন্ধোবেলায় চিনিবাস লোট্টনের মুখাগ্নি করে ফিরে এল ; এসে ঝোটনের সঙ্গে মহা ঝগড়া বাধিয়ে দিলে। চিনিবাসের চীৎকার শুনে আমি আর উপেন-দা আস্তাবলে গেলুম। গিয়ে দেখি চিনিবাস এক একবার তেড়ে তেড়ে ঝোষ্ট্রনকে মারতে যাচ্ছে, আবার ফিরে আসছে। তার চেহারা ও রকম-সকম দেখে মনে হল, চিনিবাস শ্মশান থেকে ফেরবার পথে তাড়ি খেয়ে এসেছে। শেষটায় বুঝলুম যে ব্যাপার তা নয়। লোট্টনের ত্যক্ত সম্পত্তির উত্তরাধিকারী কে হবে, তাই নিয়ে হচ্ছে ঝগড়া। ঝোটন বলছে যে, সে যখন লোটনের ভাই, তখন সে-ই ওয়ারিশ। আর চিনিবাস বলছে যে লোটন মরবার আগে তাকে বলে গিয়েছিল যে—“আমার যা কিছু আছে তা তোমাকে দিয়ে গেলুম। লোট্টনের থাকবার ভিতর ছিল একখানি কম্বল, আর একটি লোটা। ঝোটন কম্বল দিতে রাজি ছিল, কিন্তু লোটাটি কিছুতেই দেবে না বললে। কম্বলটি বেজায় ছেড়াখোড়া, তবে লোটাটা ছিল ভাল। আমি ব্যাপার দেখে হতভম্ব হয়ে গেলুম। তবে এ মামলার বিচারটা একদিনের জন্য মুলতবি রাখলুম। ( ( ) তার পরদিন সকালে চিনিবাস এসে বললে যে, কাল রাত্তিরে ঝোণ্টন লোটাটা নিয়ে ভেগেছে, আর ফেলে গিয়েছে সেই চেঁড়া কম্বলখানা। চিনিবাস রাগের মাথায় আরও বললে, “ও শালী চোর হায়, উসকো রাস্তামে পাকড়কে মারকে ও-লোটা হাম লে লেগা।” এ কথায় উপেন-দাও রেগে তার হিন্দীতে জবাব দিলেন—“তুমি চোরের উপর বাটপাড়ি করতে গিয়াথা, না পেরে এখন ঝোটুনকে খুন করতে চাত হ্যায়। ঐ লোটার লিয়ে তুমি লোটনকো পিঠে করে হাঁসপাতাল যাত৷ আতা থা। আর তার মরবার পরও লোটনের জাতবিচার নেই কারকে * তার মড়া কাঁধে করেছ। তেমি মানুষ নেহি হয়-পশু হয়।” চিনিকলস জিজ্ঞেস করলে-“মুর্দা কোন জাত হয় বাবুজী ?”