পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ses R হাম রেলকে বড় সাহেব হায় ?” আমি প্ৰাণের দায়ে হুজুর যা বললেন তাই করলুম, অর্থাৎ স্নানের ঘরে গিয়ে বিবস্ত্র হয়ে সেই শীতের রাত্তিরে সুন্নান করলুম। অমনি একটা দমকা হাওয়া এসে কাপড়ােচাপড় সব উড়িয়ে কোথায় নিয়ে গেল। আমি বিবস্ত্র হয়ে ভিজে গায়ে গোসলখানাতেই বসে রইলুম। আর সাহেব তঁর কামরায় হুটােপাট । করতে লাগলেন ও মধ্যে মধ্যে চীৎকার করে আমার প্রতি শূয়োর, গাধা, উল্লুক প্রভৃতি প্রিয় সম্ভাষণ করতে লাগলেন। আমি নীরবে সব গালিগালাজ হজম করলুম। প্ৰায় ঘণ্টাখানেক এই ভাবে কেটে গেল। আমি ভিজে গায়ে হি হি করে কঁপিছি, সর্বাঙ্গে এক টুকরো কাপড় নেই, আর পাশের ঘরে বড়সাহেব মদ খাচ্ছেন্ন ও লাফাচ্ছেন। মাঝপথে গাড়ী হঠাৎ মিনিটখানেকের জন্য থামল। ক্লিক করে একটা আওয়াজ হল-ছিটুিকিনি খোলবার আওয়াজ। তারপর গাড়ী ফের চলতে লাগল। পাশের ঘরে টু-শব্দ নেই ; তাই আমি স্নানের ঘর থেকে বেরিয়ে সে ঘরে যাবার চেষ্টা করলুম। ও সর্বনাশ! বড় সাহেব সুন্নানের ঘরের দুয়োরের ছিটুকিনি টেনে বন্ধ করে দিয়েছেন। আমি সেই অন্ধকূপের ভিতর আটক থাকলুম। আধঘণ্টা পর গাড়ী বর্ধমানে এসে পৌছল, আর আমি বাথরুমের জানােলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে, যা থাকে কপালে ভেবে ‘কুলি’, ‘কুলি’ বলে চীৎকার করতে লাগলুম। তারপর একজন কুলি এসে, ছিটুকিনি খুলে, আলো জেলে আমাকে বিবস্ত্র অবস্থায় দেখে ভুত ভেবে ভয়ে পালিয়ে গেল। শেষটায় স্টেসন মাস্টার বাবু এসে-“ভূত নেহি হায়, চাের হায়” বলতে কুলির পাশের ঘর ঢুকে আমাকে মারতে মারতে আধমরা করে প্ল্যাটফরমের উপর টেনে নিয়ে গেল । স্টেসন বাবু বললেন, “শীগগির ওকে একটা কাপড় পরিয়ে দে। যদি কোন মেমসাহেব হঠাৎ এসে উলঙ্গমূর্তি দেখে মূৰ্ছা যান তাহলে আমার চাকরি যাবে।” একজন যাত্রী আমাকে একটি শাড়ী দিলে, সেই শাড়ীখানি পরে আমি স্টেসন বাবুকে সব কথা বললুম। তিনি