পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰগতিরহস্য 8هو করলুম যে, মুখুয্যে মশায় তবে "হরিবেল”, ‘হরিবেল” এই মারাত্মক ধ্বনি করছেন কেন ?-তিনি হেসে বললেন, ইংরেজী বলছেন। কাটাকুটি ব্যাপারটা যে "horrible'-তাই বলতে চেষ্টা করছেন! এর থেকেই তীর ইংরেজী বিদ্যের বহর বুঝতে পারবেন। তিনি যে আমাদের প্রগতিকে মনে মনে গ্ৰাহ করেছিলেন, সে ইংরেজী পড়ে নয়, লোকচরিত্র দেখে-শুনে। তঁর মতামত এখন উল্লেখ করছি। আমার যখন বয়েস বছর বারো, তখন কেনারাম বাবু আমাকে একদিন বলেন যে, আমাদের এ দেশে উন্নতি কোন জিনিসে এনেছে জান ?-আমি বললুম “না।” তিনি বললেন, ব্ৰাণ্ডি। ব্রাণ্ডি না খেলে মুরগী খাওয়া যায় না, আর মুরগীর পিঠপিঠ আসে আর সব প্রগতি। ব্ৰাণ্ডি পান করলে নেশা হয়, অর্থাৎ কাণ্ডজ্ঞান লুপ্ত হয়। তখন মুরগী নিৰ্ভয়ে খাওয়া যায়। আর সেই সঙ্গে হিন্দু-মুসলমানের জাতিভেদ থাকে না। মুরগী খেতে হলেই মুসলমানের হাতে খেতে হয়। তারপরেই স্ত্রী-শিক্ষার প্রয়োজন হয়। কেননা অশিক্ষিত স্ত্রীলোকেরা ওরূপ পান-ভোজনে মহা আপত্তি করে; শিক্ষিত হলে করে না। আর স্ত্রী-শিক্ষার পিঠপিঠ আসে স্ত্রী-স্বাধীনতা। তারা লেখাপড়া শিখবে অথচ অন্দরমহলে আটক থাকবে-এ হতেই পারে না। ১ধুর থেকেই দেখতে পােচ্ছ, প্রগতির মূল হচ্ছে ব্ৰাণ্ডি, ইংরেজী শিক্ষা নয়। ইংরেজী শেখা শক্ত, কিন্তু ব্ৰাণ্ডি গেলা খুব সহজ। এ বিষয়ে অশিক্ষিত-পটুত্ব কি লোকের দেখােন ?—এই কারণে আমি ব্ৰাণ্ডি-খোরদের উৎসাহ দিই। ঐ নেশার পথই হচ্ছে যথার্থ প্রগতির পথ ; যদিও আমি নিজে মদও খাইনে, মাংসও খাইনে। ܗܝ খ্ৰীষ্টান ভদ্রলোকটি এর সাহায্য করতেন, কারণ র্তার ওখানে গেলেই তিনি চায়ের সঙ্গে মুরগীর ডিম অর্থাৎ প্রগতির ডিম সকলকেই খাওয়াতেন ।