পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চার-ইয়ারী-কথা 8 ዓ -ওদের সব বিষয়ে মত আছে, অথচ কোনও বিষয়ে মন নেই। ও জাতের লোকের ভিতরে সারা আছে, কিন্তু রস নেই। ওরা স্ত্রীলোকের স্বামী হবার যেমন উপযুক্ত, সঙ্গী হবার তেমনি অনুপযুক্ত । —কথাটা ঠিক বুঝলুম না। স্বামীই ত স্ত্রীর চিরদিনের সঙ্গী। --চিরদিনের হলেও একদিনেরও নয়---এমন ততে পারে, এবং হয়েও থাকে । —তবে কি গুণে তারা স্বামী হিসেবে সর্বশ্রেষ্ঠ হয়ে ওঠে ? --ওদের শরীর ও চরিত্র দুয়েরই ভিতর এতটা জোর আছে যে, ওরা জীবনের ভার অবলীলাক্রমে বহন করতে পারে। ওদের প্রকৃতি ঠিক তোমাদের উল্টো। ওরা ভাবে না।--কাজ করে। এক কথায়-ওরা হচ্ছে সমাজের স্তম্ভ, তোমাদের মত ঘর সাজাবার ছবি কি পুতুল নয়। -হতে পারে এক দলের লোকের বাইরেট পাথর আর ভিতরটা শীশে দিয়ে গড়া, আর তারাই হচ্ছে আসল মানুষ,-কিন্তু তুমি এই দুদণ্ডের পরিচয়ে আমার স্বভাব চিনে নিয়েছ ? --অবশ্য ! আমার চোখের দিকে একবার ভাল করে তাকিয়ে দেখ ত, দেখতে পাবে যে তার ভিতর এমন একটি আলো আছে, যাতে মানুষের ভিতর পর্যন্ত দেখা যায়। আমি নিরীক্ষণ করে দেখলুম যে, সে চােখ দুটি “লউসনিয়া” দিয়ে গড়া। লউসনিয়া কি পদার্থ জান ? একরকম রত্নইংরাজীতে যাকে বলে cat’s-eye--তার উপর আলোর “সূত” পড়ে, আর প্রতিমুহূতে তার রং বদলে যায়।— আমি একটু পরেই চােখ ফিরিয়ে নিলুম, ভয় হল সে আলো পাছে সত্যি সত্যিই আমার চোখের ভিতর দিয়ে বুকের ভিতর প্ৰবেশ করে । —এখন বিশ্বাস করছি যে আমার দৃষ্টি মৰ্মভেদী ? —বিশ্বাস করি আর না করি, স্বীকার করতে আমার আপত্তি নেই।