পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পসংগ্ৰহ و 68 পৃথিবীতে বহুলোককে অবজ্ঞা করে এসেছি—কিন্তু ইতিপূর্বে কাউকে কখনও হিংসা করিনি। বিশেষতঃ George-এর মত লোককে হিংসা করার চাইতে আমার মত লোকের পক্ষে বেশি কি হীনতা হতে পারে ? কারণ, আমার যা ছিল, তা হচ্ছে টাকার জোর আর গায়ের জোর। কিন্তু “রিণী।” আমাকে এ হীনতাও স্বীকার করতে বাধ্য করেছিল। তার শেষবারের ব্যবহার আমার কাছে যেমন নিষ্ঠুর তেমনি অপমানজনক মনে হয়েছিল। নিজের মনের দুর্বলতার স্পষ্ট পরিচয় পাবার মত কষ্টকর জিনিষ মানুষের পক্ষে আর কিছু হতে পারে না। ভয় যেমন মানুষকে দুঃসাহসিক করে তোলে, আমার ঐ দুর্বলতাই তেমনি আমার মনকে এত শক্ত করে তুলেছিল যে, আমি আর কখনও তার মুখ-দর্শন করত্নম না-যদি না সে আমাকে চিঠি লিখত। সে চিঠির প্রতি অক্ষর আমার মনে আছে,-সে। চিঠি এই :- “তোমার সঙ্গে যখন শেষ দেখা হয়, তখন দেখেছিলুম যে তোমার শরীর ভেঙ্গে পড়ছে।---আমার মনে হয় তোমার পক্ষে একটা change নিতান্ত আবশ্যক। আমি যেখানে আছি, সেখানকার হাওয়া মরা মানুষকে বঁচিয়ে তোলে। এ জায়গাটা একটি অতি ছোট পল্লীগ্রাম। এখানে তোমার থাকবার মত কোনও স্থান নেই। কিন্তু এর ঠিক পরের স্টেসনটিতে অনেক ভাল ভাল হোটেল আছে । আমার ইচ্ছে তুমি কালই লণ্ডন ছেড়ে সেখানে যাও। এখন এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি -আর দেরি করলে এমন চমৎকার সময় আর পাবে না । যদি হাতে । টাকা না থাকে, আমাকে টেলিগ্রাম করো, আমি পাঠিয়ে দেব। পরে সুন্দসুদ্ধ তা শুধে দিয়ে৷ ” আমি চিঠির কোন উত্তর দিলুম না, কিন্তু পরদিন সকালের ট্রেনেই লণ্ডন ছাড়লুম। আমি কোন কারণে তোমাদের কাছে সে জায়গার নাম করব না। এই পর্যন্ত বলে রাখি, “রিণী” যেখানে ছিল তার নামের প্ৰথম অক্ষর B, এবং তার পরের স্টেসনের নামের প্রথম অক্ষর W. ট্রেন যখন B স্টেসনে গিয়ে পৌছল, তখন বেল প্ৰায় দু’টাে। আমি জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখলুম “রিণী” প্লাটফরমে নেই।