পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রবাস-স্মৃতি তখন আমি অক্সফোর্ডে। শীতাপগমে নববসন্তের সঞ্চার হয়াছে। অভিভাবকরা রাগ করিতে পারেন, কিন্তু বসন্তল পড়াশুনার জন্য হয় নাই। পৃথিবীতে বরাবর যে ছয়টা করিয়া ঋতু পরিবর্তন প্রচলিত হইয়া আসিয়াছে তাহার কি প্রয়োজন ছিল, যদি সকল ঋতুতেই কত পালন করিতে হইবে। ফাঁকি দেবার একটা সময় আছে, ভাল ছেলেরা সেটা বোঝে না। তারা শীতবসন্ত মানিয়া চলে না এমনি কাণ্ডজ্ঞনবিহীন। একদিন পূর্ণিমারাত্রে শক্সপীয়রের নাটকে কোন এক নরোরীযুগল বলিয়াছিল, এমন রাত্রি নিদ্রার জন্য হয় নাই। কিন্তু কবির নাটকে স্থান পায় নাই এমন অনেক নরনারাযুগল আছে যাহারা প্রতিরাত্রেই ঘুমায়। তাহাদের শরীর দিবা সুস্থ থাকে। কিন্তু পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করিয়ায় যাদের কাছে পূর্ণিমা অমবস্যা চিরদিন সমান রহিয়া গেল, অত্যন্ত সুস্থ শরীরটাকে সুদীর্ঘকাল বহন করিয়া তাহাদের লাভ কি ? যহাই হৌক, ভালমন্দ বিচারের বয়স এখনো তাদের হয় নাই; যখন কর্তব্য অকর্তব্য দুটোই এক রকম সমাধা হইয়া যাইবে তখন বেকার বসিয়া বিচারের সময় পাওয়া যাইবে। আপততঃ সেদিন প্রবাসে যখন রুদ্ধ বোতলের মত মেঘান্ধকার শীতের কালো ছিপিটা ছুটাইয়া সূর্যকিরণ স্বর্ণবর্ণ সুরাস্রোতের মত উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠিয়াছিল এবং সমস্ত আকাশভরা একটি অনির্বচনায় উত্তাপ ও গন্ধ কেন এক অনির্দিষ্ট অথচ অন্তরতম সজীব পরিবেষ্টনের মত চতুর্দিককে নিবিড় করিয়া রাখিয়াছিল সেদিন আমরা কিছুকাল পূরা ছুটি লইয়াছিলাম। আমরা দুই বন্ধুতে অক্সফোর্ড পার্কে বেড়াইতে গিয়াছি। কোন উদ্দেশ্য বা সাধনা লইয়া বাহির হই নাই। কিন্তু পাদে পদে