পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዓS গল্পসংগ্ৰহ করুণরসে পরিণত করতে গিয়ে, ও-বস্তুকে এমনি ঘুলিয়ে দিয়েছ যে, সমাজের চোখে তা কলুষিত ঠেকতে পারে। কেননা সমাজের চোখ, মানুষের মনকে হয় সূর্যের আলোয় নয় চাঁদের আলোয় দেখে। তোমরা আজ নিজের নিজের মনের চেহারা যে আলোয় দেখেছ, সে হচ্ছে আজকের রাত্তিরের ঐ দুষ্ট ক্লিষ্ট আলো। সে আলোর মায়া এখন আমাদের চােখের সুমুখ থেকে সরে গিয়েছে। সুতরাং আমি যে গল্প বলতে যাচ্ছি, তার ভিতর আর যাই থাক আর না থাক, কোনও হাস্যকর কিম্বা লজ্জাকর পদার্থ নেই । এ গল্পের ভূমিকাস্বরূপে আমার নিজের প্রকৃতির পরিচয় দেবার কোন দরকার নেই, কেননা তোমাদের যা বলতে যাচ্ছি, ত” আমার মনের কথা নয়।--আর একজনের,-একটি স্ত্রীলোকের। এবং সে রমণী আর যাই হোক-চোরও নয়, পাগলও নয়। গত জুন মাসে আমি কলকাতায় একা ছিলুম। আমার বাড়ী ত তোমরা সকলেই জান ; ঐ প্রকাণ্ড পুরীতে রাত্তিরে খালি দু’টি লোক শুত,-আমি আর আমার চাকরী। বহুকাল থেকে একা থাকবার অভ্যোস নেই, তাই রাত্তিরে ভাল ঘুম হত না। একটু কিছু শব্দ শুনলে মনে হত যেন ঘরের ভিতর কে আসছে, অমনি গা ছমছম করে উঠত ; আর রাত্তিরে জানইত কত রকম শব্দ হয়,- কখনও ছাদের উপর, কখনও দরজা জানালায়, কখনও রাস্তায়, কখনও বা গাছপালায়। একদিন এই সব নিশাচর ধ্বনির উপদ্রবে। রাত একটা পর্যন্ত জেগেছিলুম, তারপর ঘুমিয়ে পড়লুম। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখলুম যেন কে টেলিফোনে ঘণ্টা দিচ্ছে। আমনি ঘুম ভেঙ্গে গেল। সেই সঙ্গে ঘড়িতে দুটাে বাজল। তারপর শুনি যে, টেলিফোনের ঘণ্টা একটানা বেজে চলেছে। আমি ধড়ফড়য়ে বিছানা থেকে উঠে পড়লুম। মনে হল যে আমার আত্মীয় স্বজনের মধ্যে কারও হয়ত হঠাৎ কোন বিশেষ বিপদ ঘটেছে, তাই এত রাত্তিরে আমাকে খবর দিচ্ছে। আমি ভয়ে ভয়ে বারান্দায় এসে দেখি আমার ভূতাটি অকাতরে নিদ্ৰা দিচ্ছে। তার ঘুম না ভাঙ্গিয়ে টেলিফোনের মুখ-নলটি নিজেই তুলে নিয়ে কাণে ধরে বল্লুম-Hallo !