পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আহুতি ইউরোপীয় সভ্যতা আজ পর্যন্ত আমাদের গ্রামের বুকের ভিতর তার শিং ঢুকিয়ে দেয়নি ; অর্থাৎ রেলের রাস্তা সে গ্রামকে দূর থেকে পাশ কাটিয়ে চলে গেছে। কাজেই কলকাতা থেকে বাড়ী যেতে অদ্যাবধি কতক পথ আমাদের সেকেলে যানবাহনের সাহায্যেই যেতে হয় ; বর্ষাকালে নৌকা, আর শীত-গ্রীষ্মে পান্ধিই হচ্ছে আমাদের প্রধান डोवलवन | এই স্থলপথ আর জলপথ ঠিক উল্টো উল্টো দিকে । আমি বরাবর নৌকাযোগেই বাড়ী যাতায়াত করতুম, তাই এই স্থলপথের সঙ্গে বহুদিন যাবৎ আমার কোনই পরিচয় ছিল না । তারপর যে বৎসর আমি বি. এ. পাশ করি, সে বৎসর জ্যৈষ্ঠ মাসে কোনও বিশেষ কাৰ্যোপলক্ষে আমাকে একবার দেশে যেতে হয় ; অবশ্য স্থলপথে । এই যাত্রায় যে অদ্ভুত ব্যাপার ঘটেছিল, তোমাদের কাছে আজ তারই পরিচয় দেব । আমি সকাল চ’টায় ট্রেন থেকে। নেমে দেখি, আমার জন্য স্টেসনে পান্ধি-বেহাৱা হাজির রয়েছে। পান্ধি দেখে তার অন্তরে প্রবেশ করবার যে বিশেষ লোভ হয়েছিল, তা বলতে পারিনে। কেননা চোখের আন্দাজে বুঝলুম যে, সেখানি প্রস্থে দেড় হাত আর দৈর্ঘ্যে তিন হাতের চাইতেও কম। তারপর বেহারাদের চেহারা দেখে আমার চক্ষুস্থির হয়ে গেল। এমন অস্থিচর্মসার মানুষ, অন্য কোনও দেশে বোধ হয় হাসপাতালের বাইরে দেখা যায় না। প্ৰায় সকলোরি পাজরার হাড় ঠেলে বেরিয়েছে, হাতপায়ের মাংস সব দড়ি পাকিয়ে গিয়েছে। প্ৰথমেই চোখে পড়ে যে, এদের শরীরের একটিমাত্র অঙ্গ-উদর-অস্বাভাবিকরকম স্ফীতি ও চাকচিক্য লাভ করেছে। আমি ডাক্তার না হলেও, অনুমানে বুঝলুম যে তার অভ্যন্তরে পীলে ও যকৃত পরস্পর পাল্লা দিয়ে