পাতা:গল্পসল্প - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



রাজরানী

 রাজকন্যা বললেন, আর-কিছুই না।

 সন্ন্যাসী বললেন, সেই দেশ-জ্বালানো অস্ত্রের সন্ধানে চললেম।

 সন্ন্যাসী গেলেন চলে। বললেন, ধিক্। চলতে চলতে এসে পড়লেন এক বনে। খুলে ফেললেন জটাজূট। ঝরনার জলে স্নান ক’রে গায়ের ছাই ফেললেন ধুয়ে। তখন বেলা প্রায় তিন প্রহর। প্রখর রোদ, শরীর শ্রান্ত, ক্ষুধা প্রবল। আশ্রয় খুঁজতে খুঁজতে নদীর ধারে দেখলেন একটি পাতার ছাউনি। সেখানে একটি ছোটো চুলা বানিয়ে একটি মেয়ে শাকপাত চড়িয়ে দিয়েছে রাঁধবার জন্য। সে ছাগল চরায় বনে, সে মধু জড়ো করে রাজবাড়িতে জোগান দিতে। বেলা কেটে গেছে এই কাজে। এখন শুকনো কাঠ জ্বালিয়ে শুরু করেছে রান্না। তার পরনের কাপড়খানি দাগ-পড়া, তার দুই হাতে দুটি শাঁখা, কানে লাগিয়ে রেখেছে একটি ধানের শিষ। চোখ দুটি তার ভোমরার মতো কালো। স্নান ক’রে সে ভিজে চুল পিঠে মেলে দিয়েছে যেন বাদল-শেষের রাত্তির।

 রাজা বললেন, বড়ো খিদে পেয়েছে।

 মেয়েটি বললে, একটু সবুর করুন, আমি অন্ন চড়িয়েছি, এখনি তৈরি হবে আপনার জন্য।

 রাজা বললেন, আর, তুমি কী খাবে তা হলে।

 সে বললে, আমি বনের মেয়ে, জানি কোথায় ফলমূল কুড়িয়ে পাওয়া যায়। সেই আমার হবে ঢের। অতিথিকে অন্ন দিয়ে যে পুণ্যি হয় গরিবের ভাগ্যে তা তো সহজে জোটে না।

 রাজা বললেন, তোমার আর কে আছে।

 মেয়েটি বললে, আছেন আমার বুড়ো বাপ, বনের বাইরে তার কুঁড়েঘর। আমি ছাড়া তাঁর আর কেউ নেই। কাজ শেষ ক’রে কিছু খাবার নিয়ে যাই তার কাছে। আমার জন্য তিনি পথ চেয়ে আছেন।

৩৯