পাতা:গল্পসল্প - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



ম্যাজিসিয়ান

 প্রোফেসার বলে উঠলেন, আর যাই হোক, বানানো কথা নয়, মন্তর নয়, তন্তর নয়, বোকা-ভুলোনো আজগুবী কথা নয়।

 আমরা ধরে পড়লুম, তবে সেই দ্রব্যগুণটা কী।

 প্রোফেসার বললেন, বুঝিয়ে বলি। আগুন জিনিসটা একটা আশ্চর্য জিনিস, কিন্তু তোমাদের ঐ-সব ঋষি-মুনির কথায় জ্বলে না। দরকার হয় জ্বালানি কাঠের। আমার ম্যাজিকও তাই। সাত বছর হরতকি খেয়ে তপস্যা করতে হয় না। জেনে নিতে হয় দ্রব্যগুণ। জানবা মাত্র তুমিও পার আমিও পারি।

 কী বলেন প্রোফেসার, আমিও পারি ঐ দেয়ালটাকে হাওয়া করে দিতে!

 পার বৈকি। হিড়িং-ফিড়িং দরকার হয় না, দরকার হয় মাল-মসলার।

 আমি বললেম, বলে দিন-না কী চাই। দিচ্ছি। কিছু না, কিছু না— কেবল একটা বিলিতি আমড়ার আঁঠি আর শিলনোড়ার শিল।

 আমি বললুম, এ তো খুবই সহজ। আমড়ার আঁঠি আর শিল আনিয়ে দেব, তুমি দেয়ালটাকে উড়িয়ে দাও।

 আমড়ার গাছটা হওয়া চাই ঠিক আট বছর সাত মাসের। কৃষ্ণ দ্বাদশীর চাঁদ ওঠবার এক দণ্ড আগে তার অঙ্কুরটা সবে দেখা দিয়েছে। সেই তিথিটা পড়া চাই শুক্রবারে রাত্রির এক প্রহর থাকতে। আবার শুক্কুর বারটা অগ্রহায়ণের উনিশে তারিখে না হলে চলবে না। ভেবে দেখো বাবা, এতে ফাণকি কিছুই নেই। দিন-খন-তারিখ সমস্ত পাক ক’রে বেঁধে দেওয়া।

 আমরা ভাবলুম, কথাটা শোনাচ্ছে অত্যন্ত বেশি খাঁটি। বুড়ে মালীটাকে সন্ধান করতে লাগিয়ে দেব।

৫১