পাতা:গল্পসল্প - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গল্পসল্প

 মিশির যত বড়ো সর্দার হোক, সেদিন সে একলা। যখন তাকে ঘেরাও করলে সে গুটিমুটি মেরে ব’সে সবাইকে আটকাতে লাগল।

 অপর পক্ষের লোক বললে, দাদা, পারবে না। কেন প্রাণ দেবে।

 মিশির বললে, নিমক খেয়েছি, প্রাণ যায় যাক; নিমকের মান রাখতেই হবে।

 চলল দাঙ্গা— শুধু লাঠির মার হলে হয়তো মিশির ঠেকাতেও পারত। অপর পক্ষ সড়কি চালালো। একটা এসে বিঁধল মিশিরের পায়ে।

 অপর পক্ষ আবার তাকে সতর্ক করে বললে, আর কেন। এবার ক্ষান্ত দে ভাই।

 মিশির বললে, মিশির সর্দার প্রাণের ভয় করে না, ভয় করে বেইমানির।

 শেষকালে একটা সড়কি এসে বিঁধল তার পেটে। এটা হল মরণের মার। পুলিসের হাতে পড়বার ভয়ে অপর পক্ষ পালাবার পথ দেখলে। মিশির সড়কি টেনে উপড়ে, পেটে চাদর জড়িয়ে, ছুটল তাদের পিছন-পিছন। বেশি দূরে যেতে পারলে না। পড়ে গেল মাটিতে।

 পুলিস এল। মিশির জমিদারকে বাঁচাবার জন্য তাঁর নামও করলে না। বললে, আমি জসিমের চাকরি নিয়ে তার ধান আগলাচ্ছিলুম।

 ম্যানেজার সব খবর পেলেন। গুড়গুড়ি লাগলেন টানতে।

 তাঁর দুধের স্নানের খ্যাতি— এ তো যে-সে লোকের কর্ম নয়। কিন্তু, নিমক খেয়েছে যখন, তখন প্রাণ দেওয়া— এটা এতই কী আশ্চর্য। এমন তো ঘটেই থাকে। কিন্তু, দুধে স্নান!

৬৬