পাতা:গল্পস্বল্প.djvu/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

( ৬ )

ইহাতে কত কাজ হয়, কত গরীব দুঃখীর উপকার করা যায়, এমন সুযোগ যেন হারাস নে।’ কিন্তু খানিক বাদেই আমি সেই টাকাটি দিয়া একটি মোমের পুতুল কিনিয়া ফেলিলাম। অমনি এখনি একজন ভিক্ষুক আমার কাছে ভিক্ষা চাহিতে আসিয়াছিল। আহা বেচারা সমস্ত দিন কিছুই খায় নাই। আমি যদি সে টাকা হইতে তাহাকে কিছু পয়সাও দিতে পারিতাম ত তাহার কত খাবার হইত—কিন্তুআমি সে সুযোগ হারাইয়াছি।”

 এই বলিয়া বালিকা কাঁদ কাঁদ হইল। রমেশ আর থাকিতে পারিল না, অনুতপ্ত হৃদয়ে বলিল, “সুষমা, আমিও আজ একটি সুযোগ হারাইয়াছি; আমি আজ মায়ের কাজ করিতে পারিতাম—তাহা করি নাই।”

 সুষমা বলিল, “তবে দেখিতেছি আমরা দুজনেই সুযোগ হারাইয়াছি। কেবল সুরেন্দ্রই লাভ করিয়াছে।”

 ইহা শুনিয়া সুরেন্দ্র একটু লজ্জিত হইয়া বলিল, “সুষমা, আমাকে ক্ষমা কর। এখন আমি বুঝিতেছি আমিও সুযোগ হারাইয়াছি। আমি পিতাকে সন্তুষ্ট করিতে পারিতাম তাহা করি নাই, নিজের বিদ্যাশিক্ষায় সময় দিতে পারিতাম তাহা দিই নাই, আমি তোমাদের সকলের অপেক্ষা অধিক হারাইয়াছি।”

 সুরেন্দ্র অনুতপ্ত হইয়া ভবিষ্যতে সুযোগের সদ্ব্যবহার করিবে বলিয়া সঙ্কল্প করিল। সুষমা নিজে সুযোগ হারাইয়া এতক্ষণ যদিও বিষণ্ণ হইয়া পড়িয়াছিল—কিন্তু অন্য দুই জনকে তাহার কথায় জ্ঞান লাভ করিতে দেখিয়া তাহারও সে কষ্ট অধিকক্ষণ রহিল না।