পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/১৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>げ0 গল্প-গ্রন্থাবলী বসন্ত বলিল, “রামাকে নিয়ে যেতে বলছেন? তা হলে—“ দত্ত মহাশয় বুঝিলেন, রামাকে লইয়া যাইতে জামাতার তেমন ইচ্ছা নাই। বলিলেন, “তুমি কেন দোমনা হচ্ছ, তা আমি বুঝতে পারছি। অবশ্য, এখন তোমার অলপ বেতন, তায় কলকাতার খরচ, পেরে উঠবে কি না, তাই ভাবছ ত? রামাকে কেবল দটি দটি খেতে দিও। ও মাইনে যেমন এখান থেকে পায়, তেমনই পাবে। আর দমত কোরো না বাবা, ওকে সঙ্গে নিয়ে যাও। ওর দ্বারা তোমার অনেক উপকারও হবে।” বসন্ত বলিল, “আজ্ঞে, আপনি যখন আদেশ করছেন, তখন ওকে নিয়েই যাব।” বেলা দুইটার পর বসন্ত বাত্রা করিল। তিনটার সময় ট্ৰেণ। দত্ত মহাশয় স্টেশনে গিয়া কন্যা-জামাতাকে গাড়ীতে তুলিয়া দিলেন। হারাণ মখায্যেও সঙ্গে গিয়াছিলেন । ট্রেণ ছাড়িবার সময় বসন্তকে তিনি গত দিনের আবেদনের কথাটি সমরণ করাইয়া দিলেন । নিমালা কলিকাতার বাসায় প্রবেশ করিয়া দেখিল, বাড়ীখানি ছোট হইলেও সন্দর ও সুসজ্জিত। বিতলে দইখানি মাত্র ঘর, কিন্তু ঘরগুলি বেশ বড় বড়। দেয়ালগলি সন্দের পেন্টিং করা। মেঝেগুলিতে চকচকে সাদা কালো মাবেল-পাথরের টালি বসানো। ধবধবে নেটের মশারিষন্তে দুইখানি হোগিন পালিস" পালঙ্ক পাশাপাশি রক্ষিত। ভাল ভাল চেযার, টেবল রহিয়াছে দেওয়ালে মানুষ সমান দুইখানা বড় বড় বেলোয়ারি আশি টাঙ্গানো। উভয় কক্ষেই বিদ্যুৎ-বাতি ঝুলিতেছে। জানালা দরজাগলিতে চিকণের কাটেন দেওয়া। একতলাব খরগুলিও বেশ সপরিসর--আলো বাতাস যথেষ্ট। সন্দর একটি স্নানের ঘর, তার শুধ, মেঝেতে নহে, আধখানা দেওয়াল পর্যন্ত মাবেল টালি বসানো। কলিকাতাবাসী ওযাকিবহাল কেহ এই বাড়ীখানি দেখিলে বলিত—"পাগল নাকি —এই বাডীর ভাড়া ৫০ টাকা! কিন্তু নিৰ্ম্মলা বা রামার নিকট ভাড়ার এই অসঙ্গতি ধরা পড়িল না। তবে আসবাবগুলি দেখিয় নিম'লা বলিল, “হাঁ গা, এই সব তুমি কিনেছ ? এ সব ত দামী দামী জিনিষ, অনেক টাকাব জিনিষ ।” বসন্ত হাসিয়া বলিল, “এ সব একটাও আমার নয়। আমি এত টাকা কোথায় পাব ?” ‘কার তবে এ সব ? বাড়ীওয়ালার ?” না। আমাদের আপসের বড় সাহেব সেদিন বিলেত গেলেন কিনা। এক বছরের ছটা নিষেছেন তিনি। আমাকে বললেন, "বসন্ত, আমার আসবাবপত্রগুলো বাখবাব জনো মিছামিছি একটা বছর বাড়ী ভাড়া গণেবো । তার চেয়ে কতক ছোট সাহেব বাখন কতক তুমি রাখ। আমি এসে আবার নেবো, বেশ যত্ন করে রেখ, যেন নট না হয়।’ আমি দেখলাম, আমায় কিছু কিছ আসবাবপত্র কিনতেই হবে—একবারে সব পারবো না অবিশ্যি—মাসে মাসে দটো একটা করে কিনতে হবে। আপাততঃ এইগলোতে কাজ চালাই—তার পর সাহেব এলে, তখন নিজেব কেনা যাবে। সাহেবের বাড়ী থেকে এইগলো গিয়ে নিয়ে আসতে—মটে ভাড়াই গেল ১৭ টাকা—অবশ্য সাহেবই দিলেন।” সরলা বালিকা গালে হাত দিয়া বলিল, “ও বাবা । মটে ভাড়া স–তে—রো টাকা ! আর, এই সব বিদ্যুৎ-পাখাগুলো ?” "এগুলোও সব বড় সাহেবের জিনিষ।” সে রান্ত্ৰি বসন্ত বাড়ীতেই রহিল। বলিল, “দুদিনেব ছট নিয়েছিলাম কিন । কাল খাওয়া-দাওয়ার পর দিনের বেলা একবার বেরতে হবে। তার পর আবার বাত্রে যেতে হবে ।” *