পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

సిట গল্প-গ্রন্থাবলী লাগিলেন। গত বৎসর উইল করিয়া তাহকে বিশ হাজার টাকার কোম্পানীর কাগজ দিয়া, ইহধাম হইতে মহাপ্রপথান করিয়াছেন। যে লোকটি “তোমার প্রেমাকাঙ্ক্ষী” “তোমার মনচোর" ইত্যাদি বলিয়া চিঠি সহি করে, তাহার নাম নরেন্দ্রনাথ মণ্ডল, ইহাদেরই জ্ঞাতি। সে লোকটি সুশিক্ষিত এবং উদরমতাবলম্বী। ব্রহ্মদেশে সেগন কাঠের তাহার বিস্তৃত কারবার আছে—কলিকাতায় তাহার ব্ল্যাঞ্চ আছে। বনলতার মামার শ্রান্ধ উপলক্ষেই বক্ষমা হইতে নরেন কলিকতায় আসে এবং বিধবা বনলতার সহিত পরিচিত হয়। তাহদের বাড়ী ভিন্ন হইলেও, প্রত্যহই এ বাড়ীতে সে আসিতে লাগিল এবং এসব ক্ষেত্রে যাহা হয়—প্রথমে আখি মজিল, তারপর মন মজিল । ব্যাপার অবগত হইয়া বনলতার মামাতো ভাইয়েরা, নরেনের সহিত তাহার বিধবা-বিবাহ দিতেও কৃতসঙ্কল্প হইলেন। এই খবর কাকমুখে রসালপরে গ্রামেও আসিয়া পে’ছিল। উইলের সংবাদও পাবে পেপছিয়াছিল। বনলতার বশরে কলিকাতায় গিয়া, বনলতার মামাতো ভাইদের উপর উকিলের চিঠি দিয়া, মহা হাঙ্গামা করিয়া, বিধবা পত্রবধকে “উদ্ধার” করিয়া আনেন। রসালপরে আসিয়া বনলতা প্রথমে অত্যন্ত ম্নিয়মাণ হইয়া পড়ে। মাসখানেক পরে পাশের বাড়ীর সমবয়সী চারশীল র সহিত তাহার সখিত্ব জন্মে। চার তার স্বামীর অভিমতে, বনলতার সহিত তাহার হস্তাকাঙক্ষীর পত্রবিনিময়ে এইভাবে সহায়তা করিতে সন্মত হয়। so অপহত পত্ৰখানিতে লেখা ছিল, “গতকল্য তোমায় পত্র লিখিয়ছি যে, শনিবার রাত্রে গিয়া তোমায় লইয়া আসিব ।” সে পরখানি যথাসময়ে চারীর হস্তগত হয়, এবং যথানিয়মে বনলতাকে সেখানি সে দিয়াও আসে। অন্যান্য পর, বনলতা পড়িয়া ছিড়িয়া ফেলিত । কিন্তু এ পরখানিতে সময় তারিখ ইত্যাদি লেখা ছিল বলিয়া, বাক্সে লুকাইয়া রাখে। বনলতার শ্বাশুড়ী তাহাকে অত্যন্ত সন্দেহের চক্ষেই দেখিয়া থাকেন। তাহার অনুপপিথতিতে মাঝে মাঝে তিনি তাহার বাক্স পেটরা গোপনে খানাতল্লাসীও করিয়াছেন–কিন্তু এ পয্যন্ত “দোষজনক” কিছুই পান নাই। এই পরখানি পেছিবার পর দিন, দ্বিপ্রহরে বনলতা চার্যশীলাদের বাড়ী গিয়াছিল—সেই সযোগে তাহার শ্বাশুড়ী অন্য চাবি দিয়া তাহার বাক্স খালিয়া, পরখানি পাঠ করেন এবং স্বামীকে দেখান। স্বামী বলেন, “আচ্ছা, আসকে না পাজি, তাকে উচিত মত শিক্ষা দেওয়া যাবে।” • শনিবার দিন বনলতার বশর তাঁহার দুইজন বন্ধকে রাত্রে আহারের জন্য নিমন্ত্রণ করেন। শ্বশুড়ী, নানা অছিলায়, রান্নাবান্নায় বিলম্ব করিলেন। অতিথিবিয়ের আহার যখন শেষ হইল, রারি তখন ১১টা। অন্য দিন বারি ১০টা না বাজিতেই বাড়ীর সকলে ঘামাইয়া পড়ে। আজ বনলতা ছটফট করিতেছে, কিন্তু বাড়ীর সকলে জাগিয়া; বাশড়ী-ননদেরা তাহাকে চোখে চোখে রাখিয়াছেন। ওদিকে বৈঠকখানা হইতে ১২টার কিঞ্চিৎ পাবে, বনলতার বশর, তাঁহার বন্ধদ্বয় সহ, লাঠি ও দাঁড় সঙ্গে লইয়া, শিব-মন্দিরের পশ্চাতে গিয়া লুকাইয়া রহিলেন। কিছুক্ষণ পরেই, ওভারকেট গায়ে, মাথায় মুখে কফাটার জড়ানো, বিমল ধীরে ধীরে আসিয়া বুটবক্ষের অন্ধকার ছায়ায় দাঁড়াইল। ক্ষণপরেই তিনজন লোক আসিয়া তাহা, মাথায়, পাশেব, বকে, পদদ্বয়ে লাঠি, কিল, চড়, ঘসি ও লাথি মারিতে মারিতে তাহাকে মাটিতে পাড়িয়া ফেলিল। প্রহারের চোটে তৎপর্বেই বিমল সংজ্ঞাহীন হইয়াছিল। লোক তিনজন তখন, অচেতন বিমলের হস্তপদ উত্তমরপে রাজবন্ধ করিল। এক ব্যক্তি কহিল, “বেটা বেচে আছে ত ? না মরেছে ?” আপন ব্যক্তি তাহার নাকের কাছে হাত দিয়া বলিল, “না-নিঃশ্বাস বেশ পড়ছে।”