পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/২৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

-ঘড়ি । ఫి&సి কত্তার কাছে আমি এই গল্প করিলে তিনি বলিলেন, নানীর ভাই বোধ হয়, ক্লারেন্ডন হোটেলে ৮নং খিদমতগার। মন্টিকৃটো গল্পের নায়ক এডমন্ড ড্যাস্টেসের সদীঘ কারাবাসকালে তাহার নাম লুপ্ত ও বিস্মত হইয়া যেমন একটা নম্বরে পরিণত হইয়াছিল, ইহাও বোধ হয় তাই। 鱼 আমার অনুরোধে নানী তাহার মেয়েকে একদিন লইয়া আসিল। দেখিলাম, মেয়েটি বেশ সশ্রী, নতন যৌবন তাহার অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ঢল ঢল করিতেছে, বেশ সভ্য-ভব্য, ফিট-ফাট। পাহাড়িয়া মেয়েদের বসেই তাহার অঙ্গ আবৃত, তথাপি উহা তার মাতার অপেক্ষা দামী ও সদশ্য। মা মাথায় দেয় সতি ওড়না, মেয়ের মাথায় সিকের ওড়না। মা'র মত সে মামলী জনতা-মোজা পরে না–সিলেকর ফ্লেশ-কলার মোজার উপর রীতিমত লেডি জতা। মা'র মত সে কাটোয়া পান করে না, কাঁচি সিগারেট খায়। কত্তার লাক্ষাতেও সে সিগারেট ধরাইল, কিছলমাত্র সঙ্কোচ নাই। নানী বলিল, যে সাহেববাড়ীতে সে চাকরী করে, সেখানে মাসে পাঁচশ টাকা বেতন পায়—সব টাকাই নিজ বিলাসিতায় ব্যয় করে। খাকী ত ঘড়ি দেখিয়া মহা খসেী। কয়েক দিন পরে শুনিলাম, ঘড়ির সে চাকরী গিয়াছে, তাহার মনিব সাহেব অন্যত্র নদলী হইয়া গিয়াছেন, ঘড়ি অন্য চাকরীর চেটায় অাছে। এখন সে প্রতিদিন তার মা'র সহিত আমাদের বাড়ী আসিতে লাগিল। খকেীর সহিত তার খুব ভাব হইয়া গেল। এখন সে প্রতিদিন ঘড়ি দেখিতেছে। তার সঙ্গে খকেী লডো খেলে, তাস খেলে, ঘটি খেলে—এই শেষের খেলাটি খকেীই তাহাকে শিখাইয়া লইয়াছে। ज्रिन আমরা এক মাস কাসিয়াঙে আসিয়াছি, ইতিমধ্যে কত্তার বাপেথার উন্নতি দেখা যাইতেছে। জবর আর হয় নাই, হজমের গোলমালও নাই, রারিতে বেশ নিদ্রাও হইতেছে। আরও উন্নতি হইত, যদি তিনি আরও বেশী করিয়া বেড়াইতেন। সকালের দিকে তিনি মোটেই বাহির হইতে চান না—আমি খাকীকে লইয়া বাহির হই। সঙ্গে অবশ্য নানী যায়—আমাদের ছাতা, ওভার-কোট প্রভৃতি বহন করিয়া। বেড়াইতে যাইতে নানীর মহা উৎসাহ । বিকালে চা-পানের পর কত্তাকে লইয়া বাহির হই। বেশী হাঁটিতে তিনি পারেন না, বড়া মানষে ত! অথচ—বড়া বলিবার যো নাই, বলিলে রাগ করেন। তিনি যখন আমায় বিবাহ করেন, তখন আমার বয়স ষোল, তাঁহার বয়স চৌত্রিশ বৎসর মাত্র —পণ যাবাকাল। তখন তিনি আমায় চিঠি লিখিয়া নীচে সহি কাঁরতেন—“ইতি তোমার বড়ো।”—এখন, বিশ বৎসর পরে, আর তিনি নিজেকে বড়ো বলিয়া স্বীকার করিতে চান না। - এক সপ্তাহ হইল, সাধার কলেজ বন্ধ হইয়াছে; কিন্তু এখনও সে আসে নাই। সে জন্য আমরা মহা ভাবনায় পড়িয়া গিয়াছি। আমরা যখন কলিকাতা ছাড়িয়াছিলাম, তখনও মহাত্মা গান্ধীর লবণ-সত্যাগ্রহ আরম্ভ হয় নাই। লবণ-সত্যাগ্রহ আরম্ভ হইবার কথা এখানে আসিয়া খবরের কাগজে পড়িয়াছি। মহিষবাথানে গোলমালের কথা, যতীন সনগাপ্তের গ্রেপ্তার ও কারাদণ্ডের কথা প্রভৃতিও পড়িয়াছি। প্রত্যহই সংবাদপত্রে দেখি, গোলমাল বাড়িয়াই চলিয়াছে, থামিবার কোনও লক্ষণ নাই। সন্ধা যদিও সত্যাগ্রহী দলে যোগদান করে নাই, তথাপি আমরা জানি, তাঁহার ষোল আনা ঝোঁক সেই দিকেই। কলেজ । বন্ধ হইল, ছেলে কীলকাতায় কি করিতেছে ? এমন সময় কত্তার নামে সন্ধার এক পর আসিল, সে পত্র পড়িয়া আমাদের মাথা ঘরিয়া গেল। সত্যগ্রহ সবধে সে উচ্ছসিত ভাষায় তাহার পিতাকে লিখিয়াছে—