পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

శిష్క్రిక్షా গল্প-গ্রন্থাবলী উকীলবাবরে বউ, মেয়েরাও আমাদের বাড়ী আসে যায়। তোমাদের সব কথাই আমি তাদের বলেছি ত ! তাই উকীলবাবরে পরিবার সে-দিন বললে, তুমি ত জেলরবাবর বাসায় প্রায়ই যাও, জিজ্ঞাসা কোরো না তাঁদের, তাঁরা যদি মেয়েটিকে রাখেন।” মনোরুমা জিজ্ঞাসা করিল, “বিধবা ত?” “না, বিধবা কেন হবে ? সধবা। কিন্তু স্বামী তার থেকেও নেই। সন্ন্যাসী হয়ে কোথায় নিরদেশ হয়ে চলে গেছে, কোনও খোঁজ-খবরই নেই।” “কত দিন নিরদেশ হয়েছে ?” “তা দিদি আমি জিজ্ঞাসা করিনি। পাঁচ-সাত বছর হবে বোধ হয়। না, অত হবে না—তার কোলে একটি ছেলে, তার বয়স চার বছর ।” “ছড়ীর বয়স কত ?” “আমার চেয়ে ছোটই হবে। এই--আঠারো-উনিশ বোধ হয়। বললে, ওটি তার প্রথম সন্তান নয়—আর একটি হয়েছিল, সেটি ছ'মাসের হয়ে মারা গেছে।” নীরবে চিন্তা করিয়া বলিল, “মানুষটা নাট-দন্ট নয় ত ?” সরোজিনী বলিল, “তা কি ক’রে জানবো দিদি ? সে নারায়ণই জানেন। কিন্তু দেখে ত নস্ট-দণ্টে বলে মনে হয় না। খাব ঠাণ্ডা, মুখে কথাটি নেই, চোখ দুটি সদাই ছলছল করছে। তা ছাড়া ধর, নন্ট-দটিই যদি হত রাঁধ নিগিরি করতে আসবে কেন ? ভরা সোমত্ত বয়স দেখতেও মন্দাঁট নয় ।” “নাম কি তার ?” “মোক্ষদা।” “ঐ যে উকীলবাবদের বাড়ী যেখানে। বরিশাল জেলার কোন একটা গ্রাম—নামটা মনে আসছে না।” মনোরমা একটা ভাবিয়া বলিল, “একদিন নিয়ে এস না তাকে সঙ্গে করে—দেখি মানুষটা কেমন। কত্তার মতটাও জিজ্ঞাসা করে রাখি। তাকে আমরা রাখবো কি রাখবো না, সে-কথা এখন থেকে কিছল বলে দরকার নেই।” সরোজিনী বলিল, “বেশ,—তা কবে আনবো বল ? তাকে শুধ বলবো এখন, চল এক জায়গায় বেড়িয়ে আসি।” মনোরমা বলিল, “কাল কি পরশ যে দিন হয় নিয়ে এস।” “বেশ, পরশাই তাকে আনবো তা হলে।” কিয়ৎক্ষণ অন্যান্য কথার পর সরোজিনী বিদায় গ্রহণ করিল। রাত্রিতে শয়নের পাবে মনোরমা স্বামীর নিকট কথাটা পাড়িল। ইন্দবাব সমস্ত শুনিয়া বলিলেন, “বামনীর কাজ খাঁজছে, তা বামন ত তোমার রয়েছে, কি করবে সে ?” মনোরমা কহিল, “রান্না-বান্নার কাজই যে তাকে দিয়ে করাতে চাচ্ছি, তা নয়। ঘরকলার অন্য সব কাজও ত আছে। এই বিদেশে পড়ে আছি, একটা মানষে-জন নেই, পাড়া-প্রতিবেশী নেই, দলটো কথা কোয়েও ত বাঁচবো ।” ইন্দবাব হাসিয়া কাঁহলেন, “ওঃ, তোমার একটি সহচরীর দরকার, তাই বল!” মনোরমা কহিল, “সে তুমি যাই বল। তার পর, বামনঠাকুরের যদি দুদিন অসুখবিসখই হ’ল, বামনের মেয়ে, তাকে দিয়ে স্বচ্ছন্দে কাজ চালিয়ে নিতে পারবো। হ’ল বা ছোটখোকাকে স্নানটা করিয়ে দিলে। এই রকম সব কাজ আর কি! তার পর ধর, যা সন্দেহ করছি তাই যদি শেষে দাঁড়ায়—” বলিয়া মনোরমা লজ্জায় অবনতমুখী হইল।