পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বি-এ পাশ কয়েদী - శిషి& জেলার ঘটনা, ও খবরের কাগজে সেই সময় পড়েছিল বললে।” ইন্দবাব বলিলেন, “আমিও ত পড়েছিলাম, আমার ত মনে ছিল না। ওর খনৰ সমরণ-শক্তি ত!” মনোরমা বলিল, “খবরের কাগজ পড়ার ওর ভারি সখ কিনা। তোমার যে ইংরেজি কাগজ আসে, ও ত পড়তে পারে না। একদিন বলছিল, দাদাবাব একখানা বাংলা কাগজ নেন না কেন, তা হলে আমরাও পড়তে পারি।” । ইন্দবাব বলিলেন, “একখানা ইংরেজি কাগজ নিচ্ছি, আবার একখানা বাংলা—এত টাকা কোথায় ?” 5ाब्र। মাসখানেক পরে, ইন্দবাবর পাচক ব্রাহ্মণ তিন মাসের ছুটী চাহিল। দেশে তার শবশর নাকি মারা গিয়াছে, কন্যাই তার একমাত্র সন্তান, জ্যোৎজমি যাহা কিছু খবশর রাখিয়া গিয়াছে, সমস্তই তাহার প্রাপ্য, কিন্তু দলেটপ্রকৃতি জ্ঞাতিরা সে সকল জবর দখল | চেষ্টায় আছে। এই বলিয়া, কয়েকদিন পরেই বামন-ঠাকুর দেশে রওয়ানা कन ! ঠিকাদারবাবর সাহায্যে অনা একজন পাচক সংগ্রহের চেষ্টা চলিতে লাগিল। পাকশালার ভার পড়িল মোক্ষদাব উপর। মনোরমাও তাহাকে মাঝে মাঝে সাহায্য করে। এইরুপ কয়েকদিন চলিলে, ইন্দবাব একদিন বিপ্রহরে আহারে বসিয়া বলিলেন, “ওগো দেখ, সেই সবদেশী কয়েদী শরৎ বড়িয্যের সঙ্গে আজ আমার অনেক কথা হ'ল।" “কি কথা হ'ল।" “সে আমায় বলছিল, ‘মশাই, জেলের অন্ন খেয়ে খেয়ে আমার ত প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে গেল ! বাড়ীর কাজ-কলম করবার জন্যে আপনার ত দুজন কয়েদী সরকার থেকে বরাদ্দ আছে, আমায় যদি সেই একজনের জায়গায় নিযুক্ত করেন ত একবেলা দলটো খেয়ে বাঁচি r—আমি বললাম, তুমি বি-এ পাস, তুমি কি জলতোলা, বাসনমাজা, এ-সব নোংরা , কাজ করতে পারবে ? তা ছাড়া, তুমি বামনের ছেলে, এ’টো বাসনই বা তোমায় দিয়ে মাজাই কি করে ? রাঁধতে জান ? সে বললে, কেন আপনার বামন ত আছে। — জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কি ক’রে জানলে আমার বামন আছে ? সে বললে, ঐ নাথনী আর গরচরণ যারা রোজ আপনার বাসায় কাজ করতে যায়, তারা বলে যে ! আমি বললাম, বামন ছিল, পালিয়েছে। রাঁধতে জান ত বল, গরচরণের বদলে তোমাকে নিই । সে বললে, ‘আজ্ঞে, রান্না-বান্না মোটামুটি যে না জানি, তা নয়। মা-ঠাকরণ একটু আধটু দেখিয়ে শুনিয়ে দিলেই কাজ চালিয়ে নিতে পারবো। আমি তাকে হেসে বললাম, "আচ্ছা, দেখি বিবেচনা করে।”—কি করবো, আনবো, তাকে ?” এই বি-এ পাস কয়েদী সৎবন্ধে মনোরমার মনে কিছু কৌতুহল ছিল; তা ছাড়া ব্ৰাহ্মণ-সন্তান ডাকাতি না করিয়াও কারাক্লেশ ভোগ করিতেছে জানিয়া তাহার উপর সহানুভূতি জমিয়াছিল। তাই সে স্বামীর প্রস্তাবে সহজে সম্মত হইল। ইন্দবোব বলিলেন, “ও যে বলেছে, ওকে একটা দেখিয়ে শুনিয়ে দিতে হবে, তুমি তা পারবে ত ?” মনোরমা বলিল, “সেই ত মস্কিল। ওর সঙ্গে কথা কইতে লজা করবে যে !” “কেন ? কাল যদি একজন নতুন রাঁধনী-বামন আসে, তুমি কি তার সঙ্গে কথা কইবে না ?” মনোরমা বলিল, “কিন্তু সে ত বি-এ পাস হবে না ।” o