পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বি-এ পাশ কয়েদী శివృశి শরৎ বলিল, “আজ্ঞে, আমি যখন মাস্টারি করতাম, তখন ছেলেদের নিয়ে আমি একটা বোডিং বলন, আশ্রম বলন, খুলেছিলাম। আমরা আশ্রমই বলতাম। মহাত্মা গান্ধীর আদশ আমরা অনুসরণ করতাম, নিজের নিজের সব কাজ আমরা নিজেরাই করতাম —এমন কি, বাসনমাজা, ঘর-ঝাঁড় দেওয়া পৰ্যন্ত। কোনও চাকর-বাকর আমাদের ছিল না। প্রথম প্রথম পাকপ্রণালী হাতের কাছে রেখে রোজই আমি নিজেই রাঁধতাম, ছেলেরা পালাক্লমে আমায় সাহায্য করত। ক্লমে তারাও সব শিখে ফেললে। তার পর, মাঝে মাঝে রধিতাম, পালা ছিল। হাতে-কলমে শেখা আর কি।” ইন্দবাব হাসিতে লাগিলেন। মনোরমা বিস্ময় ও শ্রদ্ধামিশ্রিত দটিতে বামনঠাকুরের পানে চাহিতে লাগিল। ইন্দবাবু বলিলেন, “তোমার খালাসের বঝি আর এক বছর বাকী আছে ?” শরৎ বলিল, “দশ মাস।” “দশ মাস ? হয় ত শেষে গড়কেন্ডাক্টের (সচ্চরিত্রতার) জন্যে এক মাস তুমি রেহাই পাবে। তবে তুমি স্বদেশী কয়েদী, বলা যায় না, এ অনুগ্রহ গভর্ণমেণ্ট তোমায় না-ও করতে পারেন। আপাততঃ আমি ব্যবস্থা করেছি, সারাদিন তুমি আমার বাসাতেই থাকবে, ও-বেলা তখন খাবার-টাবারগুলো করে দিয়ে পাঁচটার সময় জেলে ঢাকবে। সারাদিন বসে তুমি কি করবে ? তুমি তোমার আত্ম-জীবন-চরিত লেখ, খালাস হয়ে সে বই তুমি ছাপাবে। স্বদেশীর যে রকম হিড়িক, তোমার বই হল-হন করেই বিক্ৰী হবে। যত দিন আবার কাজ-কলম একটা না জোটাতে পার, সেই বইয়ের আয়ে তোমার চলে স্বাবে ।” শরৎ বলিল, “যে আজ্ঞে, আপনার এ পরামশ ভাল।” পরদিন বড়খোকা (নগেন্দ্র) ইস্কুল হইতে ফিরিয়া একখানা বাঁধানো এক্সারসাইজ বকে (খাতা) বামন-ঠাকুরকে দিল। মা তাকে পয়সা দিয়াছিলেন। তিন মাস অতীত হইল, কিন্তু ইন্দবাবর বামন-ঠাকুর ফিরিয়া আসিল না। মনোরমা বলিল, “ওরা ত ঐ রকমই করে। একবার ছটী নিয়ে দেশে গেলে আর সহজে অসিতে চার না ।” ইন্দবাবা বলিলেন "বশরের বিষয়-সম্পত্তি পেয়ে তার বোধ হয় অবস্থা ফিরে গেছে, আর চাকরী করবার দরকার নেই। কাজ ত চলে যাচ্ছে। কিন্তু শরৎও বোধ হয় আর বেশী দিন এখানে থাকবে না।” “বদলির হঝুেম এসেছে নাকি ?” "না, আসেনি এখনও। কিন্তু আসতে কতক্ষণ ? স্বদেশী কয়েদীকে গভর্ণমেন্ট বেশী দিন ত এক জেলে রাখে না।” 酸 “এখানে কত দিন হ’ল ওর ?” “মাস-ছয়েক হ’ল বুঝি।” "ওর মেয়াদের ত আর ছ'মাস মাত্র বাকী আছে। বেশ কাজ-কম করছিল, অতি ঠান্ডা স্বভাব, সচ্চরিত্র—বাকী ছটা মাস এখানে ও থাকলেই বেশ হত !” এই তিন মাসে শরৎ সকলেরই প্রতিভাজন হইয়া উঠিয়াছে। অন্যান্য কয়েদী যাহারা জেলরবাবর বাড়ীতে আসিয়া গহকাৰ্য্য করিবার হঝুেম পায়, একটা দলভ সযোগ তাঁহারা লাভ করে—লুকাইয়া তামাক খাইতে পায়। বাড়ীর চাকর-বাকরের সঙ্গে ভাব করিয়া, এই সুবিধাটুকু ভোগ করিয়া লয়। কিন্তু জেলে ত তামাক খাবার কোনই