পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఫిషి ty গল্প-গ্রন্থাবলী উপায় নাই। শরৎ তামাক, সিগারেট, বিড়ি কিছুই খায় না। এমন কি, আহারান্তে পাণ পৰ্য্যন্ত নয়। প্রথম দিন শরতের আহার হইয়া গেলে মনোরমা ভূত্য হতে দুটি পাণ তাহাকে পাঠাইয়া দিয়াছিল, কিন্তু শরৎ বলিয়াছিল, “মাকে বল, পাণ ত আমি খাইনে। দয়া করে দলটো সপরি-লবঙ্গ যদি দেন ত খাই।” বড়খোকা, ছোটখোকা, এমন কি, মোক্ষদার ছেলেটির সঙ্গে পয্যন্ত শরতের অত্যন্ত ভাব। বড়খোকাকে শরৎ কত দেশ-বিদেশের গল্প বলে, বিশেষ নেপোলিয়নের যন্ধের গল্প এমন সন্দের করিয়া বলিতে পারে যে, শধ্যে বড়খোকা নহে, মনোরমা, মোক্ষদাও শনিয়া মগধ হইয়া যায়। মনোরমা ত এখন শরৎকে দেখিয়া মাথায় কাপড় পৰ্য্যন্ত দেয় না। মনোরমা বলে, “ও আমার বড় ছেলে।” মোক্ষদা মাথায় কাপড় দেয় বটে, কিন্তু শরতের সঙ্গে রীতিমত কথা কহে। পবে ইন্দবাব মনোরমাকে বলিয়াছিলেন, “তোমার সহচরীটাকে শরতের কাছে বেশী যেতে-টেতে দিও না। দুজনেরই পরো সোমত্ত বয়স, জান ত, চাণক্য পণ্ডিত বলেছেন, ঘি আর আগন—একসঙ্গে রাখবে না।” মনোরমা বলিয়াছিল, “সে বন্ধি কি আমার নেই ? হাজার হোক, গেরস্তের মেয়ে আমাদের আশ্রয়ে রয়েছে ! ওর ভাল-মন্দ আমাকেই দেখতে হবে ত!” কিন্তু অলেপ অলেপ এ নিষেধ শিথিল হইয়া গিয়াছিল। একদিন মোক্ষদাকে শরতের সহিত কথা কহিতে দেখিয়া ইন্দবাব সত্ৰীকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, “মোক্ষদা এখন শরতের সঙ্গে কথা কয় দেখছি।” মনোরমা বলিয়াছিল, “এক বাড়ীতে থেকে কথা না কইলে চলে ; কুটনো কুটে , দেওয়া, বাটনা বেটে দেওয়া, রান্না-বান্নার যোগাড় করে দেওয়া, সবই ত এখন মোক্ষদাই করে। ওগো, শরৎ সে ছেলে নয়, দেবচরিত্র পুরুষ। ওরা দুজনে রান্নাঘরে বসে কাজ-কম করছে, কতদিন এমন আমি আচমকা গিয়ে পড়েছি, কখনও দু'জনকে কথাবাত্তা কইতেও দেখিনি। গভীর মুখ। কেউ কার পানে তাকায়ও না।” যে-দিন স্ত্রীর সহিত ইন্দবাবর শরতের অন্য জেলে বদলি হইবার প্রসঙ্গে কথাবাত্ত হইয়াছিল, তাহার এক সপ্তাহ পরে তিনি আপিস হইতে আসিয়া বলিলেন, “ওগো, শরতের বদলির হুকুম এসেছে।” “কোথা ?” "বক্সার সেন্ট্রাল জেলে ।” “কবে যেতে হবে ?" “পাঁচ দিন পরে।” ইন্দনবাব শরৎকে ডাকিয়াও খবরটা দিলেন। শুনিয়া সে মুখখানি চণে করিয়া झर्गश्ढन । শবতের বদলির সংবাদে বাড়ীসন্ধে সকলেই দুঃখিত। ইন্দবাবু বলিলেন, “ঠিকাদারবাবকে বলি, যদি জানাশনে একটা ভাল বামন যোগাড় করে দিতে পারেন।” শেষ দিন কৰ্ম্ম করিয়া বিকালে জেলে প্রবেশ করিবার পর্বে শরৎ মনোরমাকে বলিল, “মা, এ-কমাস আপনার বাড়ীতে বড় সুখেই ছিলাম। যেন বাড়ীর ছেলের মত ছিলাম —আমি যে জেল খাটছি, তা আমার মনেই হত না । কাল বেলা ন’টার সময় আমার নিয়ে যাবে। যাবার আগে একবার আপনার পায়ের ধলো নিয়ে যেতে চাই। আপনি বাবাকে বলে হকুমটা করিয়ে দেবেন, নইলে ত সে সময় আমাকে আসতে দেবে না।” মনোরমা সজল-নয়নে স্বীকৃত হইল। পরদিন যথাসময়ে শরৎ আর আসিল না। আজ মোক্ষদাই রাঁধবে। তবে আজ ফতেহাদোয়াজ দাহামের ছুটী বলিয়া নগেনের