পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

¿)O o গল্প-গ্রন্থাবলী আর রান্নাঘরে ঢুকো না। —বলেই আমি গামছাখানা নিয়ে সমানের ঘরে গেলাম। প্রায় পনেরো মিনিট নান করতে পারলাম না, কাঠের মাত্তি'র মত বসে রইলাম। তার পর সনান সেরে মাথা মাছতে মুছতে ও-ঘরে গিয়ে দেখি, কয়েদীদের নিয়ে যাবার জন্যে জেলের গাড়ী ফটকে দাঁড়িয়ে আছে, আর মোক্ষদা জানালার গরাদে ধরে দাঁড়িয়ে হাঁ করে ফটকের পানে চেয়ে আছে। আমি যে ঢুকেছি, তা বিবির হংস পৰ্য্যন্ত নেই।” ইন্দবাবা বলিলেন, “অ্যাঁ, তুমি দেখে ফেলেছ জেনেও ? পরেও লজা-সরম একেবারে বিসঙ্গজ’ন ?” মনোরমা বলিল, “ওগো, বুঝছ না, ধরা পড়ে দরকাণ-কাটা হয়ে গেল কিনা ! এককাণ-কাটা যায় গাঁয়ের বা’র দিয়ে দকাণ-কাটা যায় গায়ের ভিতর দিয়ে।” “কোথা সে এখন ? পালিয়েছে বোধ হয় ?” “পালাবে কেন ? নিজের বিছানায় শয়ে, বিরহিণী বোধ হয় বিরহের কান্না কাঁদছেন।” 聆 ইন্দবাব কিয়ৎক্ষণ স্তব্ধ হইয়া বসিয়া থাকার পর থামিয়া থামিয়া ধীরে ধীরে বলিতে লাগিলেন, “সংসারে মানুষ, চেনবার উপায় নেই!! ঐ পাজিটাকেই তুমি একদিন বলেছিলে—দেবচরিত্র পরিষে ; আর তাও এ মোক্ষদারই সম্পবন্ধে। আর মোক্ষদাও যে এমন ভিজে বেড়ালটি, তা ত একদিনের জন্যেও সন্দেহ হয়নি ! ছি ছি ছি, ভদ্রলোকের বাড়ীর মধ্যে এ কি কাণ্ড ! দপুরবেলা আমি এ-ঘরে নাক ডাকিয়ে ঘমেই। তুমিও মাঝে মাঝে সহরে বন্ধবোধবের বাড়ী নেমন্তন্ন খেতে গিয়েছ। দিব্যি সযোগটি পেয়েছিল ওরা। ছি ছি ছি! চলোয় যাক ! এখন কি করা যায় বল দেখি ?" মনোরমা বলিল, “ঝাঁটা মেরে বিদায় করা ছাড়া আর কি করবার আছে ? তুমি সনান করে ফেল, আমার ভাতও বোধ হয় হয়ে এল।” আহারান্তে ইন্দবাব শয্যায় বসিয়া তামাক খাইতে লাগিলেন। তামাকটা শেষ হইলেই শয়ন করবেন। মনোরমা মোক্ষদার ভাত বাড়িয়া অবহেলাভরে তাহার ঘরে থালাখানা ফেলিয়া আসিয়া, স্বামীর পাতে নিজে খাইতে বসিল । ইন্দবাবা তামাকটা শেষ করিয়া, কি পড়িতে পড়িতে ঘুমাইবেন একটা বই-টই খুজিতেছিলেন, এমন সময় বড়খোকা একখানা খাতা হাতে প্রবেশ করিয়া বলিল, “বাবা, শরৎ-দা তার আত্ম-জীবনীখানা ফেলে গেছে।” ইন্দবাব অন্য বহি না খুজিয়া, কৌতুহলবশতঃ সেইখানা হাতে লইয়াই শয়ন করিলেন। প্রথমে শেষটা দেখিলেন, সমাপ্ত হইয়াছে কি না। দেখিলেন, সমাপ্ত হয় নাই, ঢাকা জেলায় তাহার গ্রেপ্তারের কথা পৰ্য্যন্ত লেখা হইয়াছে। পাঠা উলটাইয়া এখানে সেখানে দেখিতে দেখিতে দেখিলেন, একটা পরিচ্ছেদের শিরোনামা রহিয়াছে—“আমার বিবাহ ।” সেই পাঠাতেই রহিয়াছে, অমক গ্রামের অমকের কন্যা শ্ৰীমতী মোক্ষদাসন্দেরীর সহিত আমার বিবাহ হইল। পড়িয়াই তাঁহার মনে হইল, এই মোক্ষদাই নহে ত পড়িতে পড়িতে শেষ দিকে দেখিলেন, গ্রেপ্তারের সময় দেশে সত্ৰী তাহার গভবতী ছিল। তারিখ হিসাব করিয়া দেখিলেন, এই মোক্ষদার পরের সহিত বয়স মিলিয়া যায়। অবাক হইয়া ইন্দবাবা বসিয়া ভাবিতেছেন, এমন সময় মনোরমা আহারান্তে আসিয়া দাঁড়াইল । ইন্দবাব বলিলেন, “ওগো, মোক্ষদাকে একবার এখানে ডাক ত।” । “কেন ?” “বিশেষ দরকার। এক মহত্তে দেরী কোরো না।” মনোরমা মোক্ষদার ঘরে গিয়া দেখিল, সে যেমন শইয়া ছিল, তেমনই শুইয়া আছে,