পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

OO8 গলপ-গ্রন্থাবলী পপ সম অন্ধ তুমি অন্ধ বালিকা দেখাঁন নিজে মোহন কি যে তোমার মালিকা ! ছড়িগাছটা দাও, হরিশ পাকে একটা বেড়িয়ে আসি। ফিরে এসে রবিবার সম্বন্থে দু'জনে পরামর্শ করা যাবে।” দই এ কয়দিন ধরিয়া অবসর সময়টুকু স্বামী-স্ত্রী মিলিয়া নাটকখানি বারংবার পাঠ করিয়া, মন্ত্রণা করিয়া, কথা বদলাইয়া, দশ্য বদলাইয়া, মাজিয়া-ঘষিয়া শনিবার রাত্রে উহার প্রসাধনক্রিয়া সমাপন করিল। কাল রবিবার। অবিনাশবাবার সহকমী সাতজন অধ্যাপক —এবং অবিনাশবাবর ক্লাসের একজন মেধাবী ছাত্র পঞ্চানন বস-বি-এ পরীক্ষায় ইংরাজিসাহিত্যে সে বর্ণপদক প্রাপ্ত হইয়াছিল—এই আটজনকে নিমন্ত্রণ করা হইয়াছে। বেলা ৫টার সময় তাঁহারা আসিয়া অবিনাশবাবর গহে সমবেত হইবেন। চা-পানের পর নাটক পড়া আরম্ভ হইবে। পড়িতে তিন ঘণ্টার কম লাগিবে না। তারপর রাত্রি-ভোজন। এইরুপ পরামশ"-ই হইয়াছে। রবিবার প্রাতে চা-পান সমাধা করিয়া অবিনাশবাব বাজার করিতে গেলেন। ফন্দ’ অনুসারে কাঁচা ও পাকা বাজার করিয়া সে সব বাড়ীতে আনিয়া ফেলিয়া, ট্রামযোগে মিউনিসিপল মাকেটে গমন করিলেন কেবল মটনটার জন্য—আর সব ত জগবোবার বাজারেই পাওয়া গিয়াছে। রন্ধন জন্য দুইজন রসাইয়ে-ব্রাহ্মণকে নিযুক্ত করা হইয়াছিল। তাহারা রাধিয়া, পারবেষণ করিয়া খাওয়াইয়া যাইবে। বেলা ২টার পর ব্রাহ্মণেরা হ:কা হাতে করিয়া আসিয়া নিমনতলের পাকশালা দখল করিল। চা ও জল-খাবার প্রস্তুতের ব্যবস্থা সুষমা নিজের হাতে রাখিয়াছিল: উহা বিতলে স্টোভ জবালাইয়া সম্পন্ন হইবে। পাঁচটার পর নিমন্ত্রিতগণ একে একে, দইয়ে দইয়ে আসিতে লাগিলেন। সকলে আসিয়া জমায়েৎ হইতে সাড়ে-পাঁচটা বাজিয়া গেল। ঝির সহায়তায় অবিনাশবাব চা ও জগযোগের দ্রব্যাদি বৈঠকখানায় অনিতে লাগিলেন : চা-পব্ব যখন শেষ হইল তখন ছয়টা বাজিয়া গিয়াছে। গোপালবাব এই অধ্যাপক দলের মধ্যে প্রবীণতম, তিনি বলিলেন,—“এবার নাটকখানি বের কর হে অবিনাশ।" অবিনাশবাব বিতলে গিয়া, নাটকের খাতা হাতে সৰমাকে লইয়া নামিয়া আসিলেন। বৈঠকখানা ঘরের পাশেই আর একটি ঘর ছিল, লোকটা-জনটা আসিলে এই ঘরেই শয়নের ব্যবসথা হইত। উভয় ঘরের মাঝে একটা দ্বার ছিল, এই দ্বারটির উপর পদদা ফেলা ছিল। পদার অনতিদরে একখানি চেয়ার পাতিয়া তাহাতে সষমাকে বসাইয়া, অবিনাশবাব বৈঠকখানা ঘরে ফিরিয়া আসিলেন। পাণ্ডুলিপিতে কাটাকুটি খুবই ছিল, কিন্তু তথাপি উত্তমরপে পাঠ করিতে অবিনাশবাবর কিছুমাত্র অসুবিধা হইল না; কারণ বারংবার পড়িয়া পড়িয়া উহা প্রায় তাঁহার কণ্ঠস্থই হইয়া গিয়াছিল। অবিনাশবাব বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরাজি সাহিত্যের অধ্যাপক— সাহিত্য-রসজ্ঞান তাঁর ভালই ছিল। বেশ দরদ দিয়াই তিনি পাঠ করিতে লাগিলেন। প্রথমেই গোপালবাব বলিয়া রাখিয়াছিলেন, পাঠ শেষ না হইলে কোনও শ্রোতা যেন কোন সমালোচনা না করেন। তথাপি শ্রোতৃগণ স্থানে স্থানে “বঃ, কি সন্দের ” “কি চমৎকার!” “খাসা হয়েছে এখানটি", ইত্যাদি মন্তব্য করিতে ছাড়িলেন না। এইরাপ এক একটা মন্তব্য শনিয়া অবিনাশবাবর কণ্ঠস্বর ভাবোচ্ছাসে আদ্র হইয়া উঠে, পদার আড়ালে বসিয়া সবেমার দেহেও রোমাণ উৎপাদিত হয়।