পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দধ-মা ○>。 হয়নি বটে, তবে মেমসাহেব ছড়ীকে দেখতে এসেছিলেন, তাঁর সঙ্গে কথাবাত্ত কয়ে রেখেছি, তিনি বলেছেন, বেশ ত। আমি কি ভাবে একটা ছেলে কুড়িয়ে পেয়েছি, তাঁকে সব বললাম কিনা। শানে তিনি বললেন, তা হলে এই মেয়েটাই বোধ হয় দুধ দিয়ে সে ছেলেকে বাঁচাবে, এই রকমই ঈশ্বরের বিধান। বাইবেল কোট করলেন। সকল জীবের আহারের ব্যবস্থা ঈশ্বরই করেন, সে বিষয়ে তাঁর কোনও ভুল-চকে হয় না—এই ভাবের একটা বচন। তোমার কথাও তিনি জিজ্ঞাসা করলেন যে। বলেছেন, শীঘ্রই একদিন তোমার সঙ্গে দেখা করতে আসবেন। গহিণী। আহা মেমসাহেবটি বেশ। খাব আমাদে—একটুও অহঙ্কার নেই। নিজেদের চেয়ে নেটিভদের কিছলমাত্র হীন মনে করেন না। আর, কি সন্দের বাংলা বলেন দেখেছ ? ডাক্তার। উনি যখন কুমারী ছিলেন, ও’র অভিপ্রায় ছিল, মিশনরী হয়ে এ দেশে আসবেন। তাই বিলাতেই রীতিমত বাংলা শিখেছিলেন । তার পর পাদ্রী সাহেবের সঙ্গে ও’র বিয়ে হয়। বামন ঠাকুর অসিয়া সংবাদ দিল, ভাত ঠাণ্ডা হইয়া যাইতেছে। দুজনে খাইতে গেলেন । আহার সমাপ্ত হইলে, ডাক্তার গেলেন একট, বিশ্রাম করিতে। কারণ, আবার তিনটার সময় তাঁহাকে কলেজে যাইতে হইবে। গহিণী গেলেন খোকার তত্ত্বাবধানে। চারিদিন পরে রিক্সা করিয়া খোকার দধ-মা আসিল, আসিয়াই খোকাকে কোলে লইয়া শুইল। নাম বলিল, ফলেটসিয়া। সোণার মা খটিয়া খটিয়া জেরা করিয়া সারা দিনে ফলটসিয়ার চৌদ্দপসরষের খবর সংগ্ৰহ করিয়া লইল। জাতিতে তাহারা দোষধ, পাটনা জেলায় বাড়ী, পিতা জীবিত নাই। এখানে শিয়ালদহের নিকট তাহার মাতুল সপরিবারে বাস করে, সেখানেই সে থাকত। কারণ, তাহার বশবর-শবাশড়ী জীবিত নাই। আট বছর বয়সে তাহার বিবাহ হইয়াছিল, স্বামী পাটনা কলেজের কোন সাহেবের কুঠীতে বেয়ারার কাজ করে, গত বৎসর বড়দিনের ছটীতে সাহেবের সঙ্গে কলিকাতায় আসিয়াছিল। পাজার বন্ধে সাহেব যদি আসেন, তবে সেও আসিবে, কিন্তু পজার বন্ধে সাহেব বড় একটা কলিকতায় আসেন না, মসোঁরী বা সিমলা পাহাড়ে যান, তবে বড়দিনের ছুটীতে নিশ্চয় আসিবেন—প্রতি বৎসরই আসেন। ইত্যাদি। পরদিন ডাক্তার সাহেব আসিয়া পত্নীর সহিত চা-পান করিতে করিতে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি গো, তোমার খোকার দুধ-মা খোকাকে যত্ন-টত্ব করছে ?” গহিণী। হ্যাঁ, তা করছে বটে। কিন্তু— ডাক্তার। কিন্তু কি ? গহিণী। মা গো—কি কাল ছড়ী, যেন আবলুস কাঠ ! . ডাক্তার। জাতে দোষাধ কিনা ! দোষাধ পশ্চিমে খব, ছোট জাত। তুমি বলছ মাগোঃ কি কালো—ওর স্বামী বোধ হয় ওকেই দ্যাখে রম্মভা কি তিলোত্তমা—বলিয়া ডাক্তার সাহেব হাসিতে লাগিলেন। গহিণী বলিলেন, “বলছিল, ওর স্বামী তার মানবের সঙ্গে পজোর বন্ধে আসতে পারে। তখন ছড়ী হয়ত দশ-বারোদিনের ছুটী চাইবে—তা হলে তখন খোকার কি হবে ?” ডাক্তার সাহেব বলিলেন, “সে ত এখন মাস দই দেরী আছে। ছুটী যদি চায়-ই, যা হয় একটা ব্যবস্থা করা যাবে।” দধ-মা খোকাকে ষেরাপ যত্ন করিতে লাগিল, তাহাতে সকলেই তাহার উপর প্রীত হইলেন। ফলেটসিয়া নামটা বড় লম্বা বলিয়া উহা সংক্ষিপ্ত করিয়া সকলে তাহাকে