পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভতে না চোর ? अथश्र नौब्रटन्छ्न আমার প্রপিতামহ মহাশয় বিষয়কম উপলক্ষে দিল্লী সহরে আসিয়া বাস করিয়াছিলেন। সেই অবধি বংশানুক্ৰমে আমরা দিল্লীরই অধিবাসী বাঙ্গালী বলিয়া এখনও নিজেদের পরিচয় দিয়া থাকি বটে, কিন্তু আমাদের মধ্যে বাঙ্গালিত্বের পরিমাণ উচ্চ-ক্রমের হোমিওপ্যাথিক ঔষধের মত বিরল হইয়া দাঁড়াইয়াছে। আমাদের আদিবাস ডমরদহ গ্রাম বঙ্গের মানচিত্রে কোন প্যানে অবস্থিত, তাহাও জ্ঞাত নহি। বাসতবিক, আমার সহধর্মিণী শ্ৰীমতী শৈলবালা দেবী খাঁটি বাংগালিনী না হইলে এতদিন আমি মাতৃভাষার একটি কথাও মনে করিয়া রাখতে পারিতাম কি না বিশেষ সন্দেহ। আমাদের অবস্থা পাবে খুব ভাল থাকিলেও, পিতা ও পিতামহের দোষে আমি এক প্রকার নিঃসব। শনিয়াছি আমার পিতামহের আমলে আমাদের এই আটালিকাখানি এই সবিস্তৃত দিল্লী সহবের তদানীন্তন কোনও রঙ্গিণীর চরণরেণকোয় বঞ্চিত হয় নাই। আমার পিতার চরিত্রও নিন্দোৰ ছিল না :-কিন্তু তাঁহার ক্যাসবাক্সে টাকাও অধিক ছিল না। শেষ দশায় তিনি বাডীখানি বন্ধক দিয়া যান; তাঁহার মৃত্যুর পরে, আমি সন্ত্রীর অলঙ্কার বিক্ৰয় করিয়া বহনকটে বাড়ীখনি উদ্ধার করি। এখন অনেক উমেদারীর পর জজ সাহেবের কাছারিতে সেরেস্তাদারী কমে প্রবৃত্ত আছি। মহল্লা "মোসাক চোঁকে" আমাদের বসতি। দিল্লীর এই অংশ অপেক্ষাকৃত নিজন। আমাদের বাড়ীটি সেকেলে ধরণের, চকমিলান প্রকান্ড তিনতলা আটালিকা—অনেকগুলি ঘর। আমরা সবামী সন্ত্রী দটি প্রাণী, দটি মেয়ে, তিনটি ছেলে, আমরা অত বড় বাড়ী লইয়া কি করিব ? অনেক দিন হইতে মনে করিতেছিলাম, যদি ভাড়াটিয়া পাই, তবে তেতলার উপরের ঘরগুলি ভাড়া দিই। তেতলার ভাল ঘরগুলি এবং গ্রীষ্মকালের রাত্রে ছাদের মন্ত বায়র মহাসুখ অন্যের জন্যে ছাড়িয়া দিতে যে প্রস্তুত হইয়াছিলাম, তাহার বিশেষ কারণ ছিল। বাড়ীর ভিতর দিয়া না যাইয়া, বাহির হইতেও তেতলার উপর পৌঁছান যায়। রাস্তার ধারে যেখানে আমাদের সদর দরজা, তাহার বাম দিকেই একটা গলির মত আছে। সেই গলিতে সিড়ির যে দরজা আছে, তাহা দিয়া পরে পরে দোতলায় ও তেতলায় যাওয়া যায। সিড়ির যে দরজা দোতলায় খলিয়াছে, সেইটিকে স্থায়ীভাবে বন্ধ করিয়া দিলেই আর আমাদের সঙ্গে তেতলার কোনই সম্বন্ধ রহিল না। নীচের তলায় আমার প্রপিতামহ মহাশয়ের “দফতরখানা” ছিল—কমচারী লোকজনে সদা পাণ থাকিত; সেই জন্য মেয়েছেলেদের বাহিরে যাইতে হইলে এই সিড়ির দরজার মখে পাকী আসিয়া লাগিত;—অথাৎ এইটাই যেন আমাদের খিড়কী দরজার মত ছিল। আমি যে উপরতলাটি ভাড়া দিব, তাহা অনেক দিন হইতে অনেক লোকের কাছে বলিয়া বেড়াইয়াছি। কয়েকটা লোক চাহিয়াও ছিল, কিন্তু কেহই মনের মত হয় নাই বলিয়া দেওয়া হয় নাই। হয় অতি অলপ ভাড়া দিতে চায়, নয়ত মসলমান, নয়ত আর কোনও বাধা থাকে। একদিন রবিবার অপরাত্নে বৈঠকখানা ঘরে চেয়ারে বসিয়া তামাক খাইতেছি, মৌলবী সাহেব তত্ত্বপোষেব উপর ছেলেদের লইয়া সরে করিয়া করিয়া "চয়া হঙ্গে রফতন কুনদজানে পাক” ইত্যাদি গোলেস্তাঁ পড়াইতেছেন, এমন সময় একটি ফিরিঙ্গি সাহেব আসিয়া আমাকে অভিবাদন করিলেন। আমি তাঁহাকে সাহেব দেখিয়া থতমত খাইয়া উঠিয়া চেয়ার ছাড়িয়া দিলাম, নিজে তক্তপোষে বসিলাম। সাহেব বলিলেন—“বাবা আপনার নাম সেরেস্তাদারবাব?” “আজ্ঞে হাঁ।”