পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যবেকের প্রেম ২৯ ছিলাম, আজীবন আমার মতা পত্নীর পবিত্র মতি বলকে করিয়া সেই ভালবাসায় তন্ময় হইয়া থাকিব, তাহাষ্ণুে ধ্যান করিয়াই জীবনের অবশিষ্ট দিনগুলি কাটাইয়া দিব, একনিষ্ঠ পরীপ্রেমের দস্তান্ত জগৎকে দেখাইব—সে প্রতিজ্ঞা আমার কোথায় রহিল ? ছি ছি— আমি কি নীচ ! কি দৰবল ! কি অপদাৰ্থ ! আমি ত মনুষ্য নামের অযোগ্য। আমার মৃত্যুই শ্ৰেয়ঃ।” সারাদিন মহেন্দু বিষয় বদনে বাসায় বসিয়া কাটাইল। যাহা অদটে ছিল, তাহা ত হইয়াই গিয়াছে—এখন ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে কি করা কত্তব্য, তাহাই সে চিন্তা করিতেছিল। একবার বাক্স খালিয়া সন্ত্রীর চিঠির বাণ্ডিলটি বাহির করিল। মনে হইল, চিঠিগলি যেন চীৎকার করিয়া বলিতেছে—“অপবিত্র পশু ! ঐ কলঙ্কিত হতে আমাদের পশ করিবার অধিকার আর তোমার নাই।” মহেন্দ্রের হতে সেই চিঠির বাণ্ডিল যেন জলন্ত অঙ্গারের মত অনভূত হইল। সে উহা বাক্সে ফেলিয়া, বাক্স বন্ধ করিল। রাত্রে শয্যায় শয়ন করিয়াও সে অনেকক্ষণ এই বিষয়ে চিন্তা করিল। অবশেষে স্থির করিল, জোর করিয়া, শাসন করিয়া, অবাধ্য মন-মাতঙ্গকে ও পথ হইতে ফিরাইতে স্থইবে। প্রলোভনের পথে আর পদাপণ করা উচিত নয়। মেজর সাহেব যতদিন না ফেরেন, ততদিন আর তাঁহার বাড়ীতে সে যাইবে না—তিনি ফিরিলেও আর যাইবে না —তাঁহাকে বাঙ্গলা পড়ানো পবিত্যাগ করাই সে সিথরসঙ্কল্প করিল। নেশার ঝোঁকে একবার বিপথে পা দিয়াছে বলিয়া আজীবন যে সেই পথেই চলিতে হইবে, তাহার কোনও কারণ নাই—আবার চেষ্টা করিয়া, সংযম-সাপনা করিয়া দঢ়চিত্তে সাপথেই নিজেকে চালনা করিতে হইবে। পবদিন সোমবারে মহেন্দ্র তাহার অফিসে গেল। পাব হইতে সে স্থির করিয়া রাখিয়াছিল, আজ পাঁচটা বাজিলেই সটান সে বাসার পথ ধরিবে-সাহেবের কুঠীর ধারে কাছেও যাইবে না। কিন্তু তিনটার পর এ বিষয়ে তাহার মনে একটা বিধা প্রবেশ করিল। এরপভাবে না বলিয়া কহিয়া পলায়ন করা কি নিতান্ত অভদ্রতা হইবে না ? তার চেয়ে, যথাসময়ে গিয়া মেমসাহেবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়া, কোনও একটা ওজর দেখাইয়া বিদায় লওয়াই ভাল। ভদ্রতাও রক্ষা হইবে—সকল দিক বজায়ও থাকিবে: , কারণ, মহেন্দ্রের সঙ্কল্প এখন সিথর—এলসির মোহজালে আর কিছুতেই সে নিজেকে জড়াইতে দিবে না। ক্ৰমে, “ভদ্রতা রক্ষার” জন্য মহেন্দ্রের মন বড়ই ব্যাকুল হইয়া উঠিল। সে ঘন ঘন ঘড়ির পানে চাহিতে লাগিল, কতক্ষণে পাঁচটা বাজে। অবশেষে পাঁচটা বাজিল। মহেন্দ্র কলম ফেলিয়া, কাগজপত্র গছোইযা দেরাজ বন্ধ করিয়া, হ্যাট ও ছড়ি হতে আফিস হইতে বাহির হইষা পড়িল। মেজর সাহেবের কুঠীর নিকট গিয়া দেখিল এলসি বারান্দায় দাঁড়াইয়া পথের পানে চাহিয়া আছে। ফটকের ভিতর প্রবেশ কবিয়াই মহেন্দ্র হ্যাট তুলিয়া তাহাকে অভিবাদন করিল। বারান্দায় উঠিতেই, এলসি অগ্রসর হইয়া আসিয়া স্মিতমখে বলিল, “ওয়েল মোহেন, নটি বয়!—কাল তুমি আস নাই কেন বল ত ? আমি তোমার উপর ভা—রি রাগ করিয়াছি!" মহেন্দু বলিল, “কাল যে রবিবার ছিল।” 釁 “হ’লই বা রবিবার 1 তুমি ত জান, আমার স্বামী এখানে নাই, আমি একলাটি রহিয়াছি। নাই বা পড়িলাম—দজেনে বসিয়া গল্পে-সলেপ আমোদে সন্ধ্যাটা ত কাটানো বাইত ! কাল বিকালে তোমার কোথাও কোন কাজ ছিল বুঝি ?” “না, কাজ এমন বিশেষ কিছুই না।” “আচ্ছা এখন চা খাইবে চল। তাজ আর পড়িতে ইচ্ছা করিতেছে না। চা খাইয়া, চল, দুজনে ময়দানে একটা বেড়াইয়া আসা যাউক ৷” so