পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গলে বেগমের আশ্চৰ্য্য গল্প *ෆඳෆ গণের পদতলে পতিত করিয়া তাহার অঙ্গ ছিন্নভিন্ন করাইয়া, সেই মাংস চিল ও কুকরগণকে না খাওয়াইতে পারি, ততদিন কোনও সংসার-সুখের বশীভূত হইব না। আমি বাকফি নগরে গিয়া নিজ অভিপ্রায় সফল করিয়া, পরে তোমাকে বিবাহ করিব। তখন তোমার সন্দের গ্রীবাতে ভুজবন্ধন করিয়া তোমার যৌবনসন্ধা পান করিব।” লতিফাবান রাজকুমারকে ভুলাইবার জন্য সেই নিজন কক্ষে অনেক প্রকার হাব ভাব প্রকাশ করিতে লাগিল, কিন্তু রাজকুমার অটল রহিলেন। তখন লতিফাবান মনে করিল “ইহাকে মদ্যপান করাইলে আমার মনস্কামনা পণ হইবে। নেশার অবস্থায় প্রতিজ্ঞা ভুলিয়া আমার দাস হইয়া আমাকে সখী করবে।" মনে এই বিচার করিয়া লতিফাবানর সহচারগণকে ডাকাইয়া পানপাত্র ও মদ্য আনিতে কহিল। অবিলম্বে একটি প্রবণনিমিত হীরকখচিত পানপান্ত উপস্থিত হইল এবং বিবিধ প্রকারের সঙ্গেবাদ মদিরা আনীত হইল। এই সকল রাখিয়া সহচারগণ বিদায় হইল। লতিফাবান এক পাত্রে মদিরা ঢালিয়া প্রথমতঃ রাজকুমারের হতে প্রদান করিল। কিন্তু তিনি বলিলেন—“প্রিয়সখি, প্রথম পাত্র তোমারই পান করা উচিত।”—বলিয়া রাজকুমার স্বহস্তে সেই পাত্র লতিফাবানর অধরের নিকট ধরিলেন। লতিফাবান তাহা পান করিয়া আর এক পাত্র মদ্য ঢালিয়া, রাজকুমারের গলদেশে বামভুজ বেস্টন করিয়া, তাঁহাকে পান করাইয়া দিল। এইরুপ কিয়ৎক্ষণ চলিতে লাগিল। ক্ৰমে মত্ততার প্রভাবে লতিফবানব বধি-বিপৰ্য্যয় ঘটিল। সে রাজকুমারের গলবেটন করিয়া প্রেমভরে তাঁহার মুখচমবন করিতে লাগিল। রাজকুমারেরও বিলক্ষণ মত্ততা উৎপন্ন হইয়াছিল, কিন্তু তথাপি তিনি অটল রহিলেন । রাজকুমারের এইরুপ অনিচ্ছা দেখিয়া অবশেষে লতিফাবান সখিগণকে ডাকাইয়া নত্যগীত করিতে আদেশ দিল। ভাবিল, নত্য ও সঙ্গীত প্রেমের উত্তেজক—কিছুকাল এইরুপ উৎসব করিলে রাজকুমালের মন গলিতে পারে। সখিগণ নানা যন্ত্র-তল আনিয়া নত্যগীত আরম্ভ করিয়া দিল। এদিকে মদ্যপানও চলিতে লাগিল। তিন দিন এইরপে অতিবাহিত হইল, তথাপি রাজকুমার প্রতিজ্ঞা ভুলিলেন না। চতুৰ্থ দিন রাজকুমার বলিলেন—“প্রিয়ে লতিফাবান, তিন দিন এখানে ব্যথা আমোদে অতিবাহিত করিলাম। এবার আজ্ঞা কর, বাকাফ নগরে যারা করি। তোমার প্রণয় আমার হদয়কে দগধ করিতেছে। ঈশ্বরেচ্ছায় বাকাফ নগরে গিয়া স্বীয় অভিপ্রাষ সিদ্ধ করিষা, আসিয়া তোমার প্রেম-সরোবরে অবগাহন করিব।” ক্ৰোধে অভিমানে লতিফবনির অন্তঃকরণ দগধ হইতেছিল। সে ভাবিল –“আমি এত করিয়া ইহার প্রণয় যাদ্ধা করিলাম তথাপি আমার অভিলাষ পণ করল না ? আচ্ছা, ইহার সমচিত প্রতিফল দিতেছি।” দাসীকে আজ্ঞা করিল—“ও ঘরে যে এক কোঁটা মাজম আছে তাহা আনিয়া দাও ত।“ মাজম আসিলে ছলনাময়ী পাপীয়সী বাজকুমারকে বলিল—“প্রিয়তম, ইহা একটা ভক্ষণ কর। ইহা অত্যন্ত প্রণোয়ত্তেজক।” রাজকুমার তাহা ভক্ষণ করিবামাত্র তাঁহার বন্ধিসন্ধি লোপ পাইল. তিনি অজ্ঞান হইয়া ভূমিতে পতিত হইলেন। তখন লতিফাবান সপাকৃতি একটা যটি বাহির করিয়া, তাহাকে মনঃপত করিয়া, সেই যটি লইয়া রাজকৃমারের পাঠদেশে আঘাত করিল। রাজকুমার ভূমি হইতে উঠিয়া দাঁড়াইয়া যন্ত্রণায় ঘরপাক খাইতে লাগিলেন এবং দেখিতে দেখিতে পুনরায ভূমিতে পতিত হইলেন। পতিত হইবামাত্র তিনি একটি হরিণের আকৃতি প্রাপ্ত হইলেন। লতিফাবান তখন বর্ণকার ডাকাইয়া রাজকুমারের শঙ্গে সোণায় বাঁধাইয়া দিল। মখমলের উপর জরির কাজ করা এক আঙ্গিয়া তাঁহাকে পরাইয়া দিল। গলার একটি রেশমী রমাল বাঁধিয়া দিয়া তাঁহাকে উদ্যানে ছাড়িয়া দিল।