পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গলে বেগমের আশ্চৰ্য্য গল্প ©q6; খাইতে দিলেন। উত্তম সংগন্ধি গোলাপী সরবৎ তাহকে পান করিতে দিলেন। বাদশাজাদা এতদিন ঘাস খাইয়া বিশেষ কটভোগ করিয়াছিলেন। এই সকল উপাদেয় পান ভোজন পাইয়া পরম পরিতৃপ্ত হইলেন। খাওয়া হইলে জমিলাবান নিজ রমাল দিয়া হরিণের মখ মছাইয়া দিয়া আবার আদর করিয়া তাহার গায়ে হাত বলাইতে লাগিলেন। তাঁহার এই স্নেহ-ব্যবহারে বাজকুমারের মনে অতি পরিতাপ উপস্থিত হইল। মনে করিলেন—‘হায়, এই সন্দেরী আমাকে সামান্য পশু বলিয়া জ্ঞান করিতেছেন। আমার যদি মনুষ্যদেহ থাকিত, যদি বাকশক্তি থাকিত, তবে আত্মপরিচয় দিয়া ইহার শরণাপন হইতাম।” এই কথা ভাবিতে ভাবিতে তাঁহার চক্ষা দিয়া অবিরল ধারায় আশ্রজেল নিগত হইতে লাগিল । তাহা দেখিয়া জমিলাবান আশ্চৰ্য্যান্বিত হইয়া দাসীকে বলিলেন—“দেখ দেখ, হরিণ কাঁদিতেছে। পশতু হইয়া এমন করিয়া কাঁদে কেন ? এরপে ত কখনও দেখি নাই।” দাসী বলিল—“স্বামিনি, বোধ করি এ কোনও মনুষ্য হইবে। কাহারও ইন্দ্ৰজাল প্রভাবে পশুদেহ প্রাপ্ত হইয়াছে।” _ _ যখন এই প্রকার কথোপকথন হইতেছিল, তখন হরিণ ধীরে ধীরে নিজ মস্তক জমিলাবানর পদতলে স্থাপন করিয়া, ব্যাকুল দটিতে তাঁহার পানে চাহিয়া রহিল। এই সকল দেখিয়া শুনিয়া জমিলাবানর মনে প্রতীতি জন্মিল যে, দাসীর কথাই সত্য। বলিলেন—“দাই, তুমি যাহা বলিয়াছ তাহাই ঠিক। নিশ্চয়ই ইহা লতিফাবানর কাৰ্য্য। সেই এইরপে মনুষ্যকে পশতু করিয়া বাখে। তুমি যাও, ও ঘর হইতে মাজমেব ডিবিয়া লইযা আইস।" আজ্ঞানসারে দাসী ডিবষা লইয়া আসিল। জমিলাবান তাহাব কিযদংশ লইযা আদর কবিযা হরিণকে খাওয়াইযা দিলেন। মাজম খাইয়াই হরিণ অচেতন হইয়া গেল। তখন জমিলাবান গদিব নিম্বন হইতে এক ছড়ি বাহির করিয়া, তাহা মন্ত্রঃপত করিষা ধীরে ধীরে হরিণের কন্ধদেশে আঘাত করিলেন। হরিণ তখন মাটিতে লটাপটি করিতে লাগিল এবং অবিলবে মনুষ্যমত্তি পরিগ্রহ করিল। মনুষ্যাকৃতি প্রাপ্ত হইষা প্রথমে রাজকুমার জান পাতিয়া ঈশ্বর সমীপে নিজ অন্তবের ধন্যবাদ প্রোণ করিলেন । তাঙ্গাব পল জমিলাবানবে দিকে ফিরিযা বললেন—“তে স চরিতে, তুমি আমার পনস্তজীবন দান কবিলে। কি বলিয়া তোমায় ধন্যবাদ দিব ? আমার প্রত্যেক কেশ তোমার দয়ার জন্য কৃতজ্ঞ।” তখন জমিলাবান রাজকুমারকে স্নান করাইয়া রাজবস্ত্র পরাইয়া দিলেন। তৎকালে রাজকুমারের অলৌকিক রপ এবীপ জ্যোতিময় হইয়া প্রকাশ পাইল যে জমিলাবান তখনি তাঁহার পদে দেহ মন সমপণ করিলেন । রাজকুমার ত হরিণাবস্থা হইতেই জীমলাবানর রুপদশনে হৃদয় হারাইয়াছিলেন। জমিলাবান তাঁহাকে বলিলেন—“আপনি কে এবং কোথা হইতেই বা আসিয়াছেন ? আপনার প্রয়োজনই বা কি, সমসত প্রকাশ করিয়া বল,ন।” রাজকুমার তখন নিজ আমলে বক্তান্ত জমিলাবানর সমখে বর্ণনা করিলেন। তাঁহার ইতিহাস শুনিয়া জমিলাবান কহিলেন—“হে প্রিয়, বাকাফ নগরে যাইবার এক চতুর্থ মাত্র পথ তুমি অতিক্ৰম করিয়াছ। এখনও বারো আনা অংশ পথ বাকী আছে। ইহারই মধ্যে তুমি এত দুঃখ ক্লেশ পাইয়াছ, বাকী পথ অতিক্ৰম করিতে হইলে তুমি প্রাণে বাঁচবে না। সে পথ অতীব ভয়ানক ‘ অতএব তোমার পণ পরিত্যাগ কর । মিছামিছি প্রাণ খোয়ানো বৃদ্ধিমানের কম নহে। আমার এই অনাথভবন নিজ সখেভবন মনে করিয়া এইখানেই জীবনকালের সখে সম্মেভাগ কর। তোমায় মনষোমত্তিতে দেখিবামাত্র আমি তোমাকে দেহ মন সমপণ করিয়াছি। তোমার সথেকেই আমি নিজ সুখ বলিয়া জ্ঞান করিব এবং সকল প্রকারে তোমার সন্তোষ সাধনে যত্নবতী থাকিব।”