পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

●●も গল্প-গ্রন্থাবলী রাজকুমার কহিলেন—“প্রেয়াস, তোমার নিকট আমি জীবন পাইয়াছি, সতরাং এ জীবন তোমারই। অলপদিনের জন্য তোমার বিচ্ছেদ ক্লেশ সহ্য করিয়া, বাকাফ নগরে গিয়া, নিজ অভীষ্ট সিদ্ধ করিয়া ফিরিফা অসি। তাহার পর তোমায় মুসলমান ধৰ্ম্মানসারে বিবাহ করিয়া, চিরদিন হাদয়ে বধিয়া রাখিব।” o জমিলাবান যখন দেখিলেন যে, রাজকুমার কোন মতেই বাকাফ যারা হইতে নিবত্ত হইবেন না, তখন দাসীকে আজ্ঞা করিলেন—“হজরৎ ইসাক পয়গম্ববরের ধনব্বাণ, তৈমসী ঢাল এবং আকবর সালেমানী তরবারি লইয়া আইস।” দাসী । উক্ত তিন অঙ্গ আনিলে পর জমিলাবান রাজকুমারকে কহিলেন—“এই তিনটি অস্ত্ৰ তুমি সঙ্গে লইয়া যাও । এ তিন অস্ত্র অত্যন্ত দলভ সামগ্রী। এই আকবর সালেমানী তবরারির গণ এই যে, যদি পর্বতগারেও ইহা আঘাত করা যায়, তবে সাবান যেমনি তারের ধারে সহজে কাটিয়া যায়, এ পর্বতও সেইরাপ কাটিয়া যাইবে। আর এই তৈমসী ঢালের গণ এই যে, ইহা যাহার নিকট থাকিবে, শত যোদ্ধাও যুগপৎ তাহাকে আক্ৰমণ কবিলে বিপদাশঙ্কা নাই। আর এই পয়গম্বর ইসাকের ধনবোণেরও গণে অদ্ভুত। এই ধনর শরসন্ধান অব্যথা, যে যত বড়ই বলবান হউক, এই শরের আঘাতে তাহার নিশ্চিৎ মৃত্যু। এই তিনটি অমল্য বস্তু সাবধানে রক্ষা করিবে। আর এক কথা। এই পথে অগ্রসর হইলে সী-মোরগের বিনা সাহায্যে পথ অতিক্ৰম করিতে পারবে না। কারণ, বাকাফ পথে সাতটি বহৎ বহৎ নদী আছে। সে নদী সমদ্র অপেক্ষাও ভয়ানক, পার হওয়া মনুষ্যজাতির পক্ষে একান্ত অসম্ভব।" রাজকুমার জিজ্ঞাসা করিলেন—“প্রিয় সখি, সী-মোরগ কোথায় আছে ? এবং কি করিয়াই বা আমি সে পথানে পেপছিব ?” জমিলাবান কহিলেন—“এখান হইতে একদিনের পথের পর একটি গহ আছে। সে পথানের নাম সফহাপথী। সেখানে একটি কুণ্ড দেখিতে পাইবে। তুমি সেখানে রাত্রে বিশ্রাম করিও। রাত্রে অনেক পশু সেখানে আসিবে, তাহার মধ্যে দুই চারিটা পশ বধ করিয়া আপনার কাছে রাখিয়া দিও। রাত্রি গভীর হইলে আশী হাত লম্বা একটি ব্যাঘ্ৰ আসিবে। সেই ব্যাঘ্ৰ বনের রাজা। তাহার সহিত আরও অন্যান্য ব্যাঘ্রও আসিবে । ব্যাঘ্ররাজকে দেখিবামাক তাহার সম্মুখে গিয়া তাহাকে সেলাম করিও এবং রমাল দিয়া তাহার সমস্ত শরীর সাবধানে মুছিয়া দিও। তাহার পর বধ করা পশু মাংস তাহাকে খাইতে দিও। তাহা হইলে ব্যাঘ্ররাজ তোমার উপর সন্তুষ্ট হইবে এবং অপর কোনও পশ তোমার কোনও অনিষ্ট করিতে পরিবে না। এই প্রকারে সারা পথ ব্যাঘ্ররাজের সেবা করিও । তাহার পর দুই তিন দিনের পথ যাইলে সম্মুখে দুইটি রাস্তা দেখিতে পাইবে। সাবধান, দক্ষিণ দিকের পথে যাইও না। বামদিকের পথ ধরিও । সেই পথে যাইতে যাইতে ক্ৰমে হাবসীদিগের এক দাগ দেখিতে পাইবে। সেই নগরের নাম খমোশা। সেই পথানে চল্লিশজন মহাবীর হাবসী সেনাপতি আছে। প্রত্যেকের অধীনে পাঁচ পাঁচ সহস্ৰ করিয়া হাবসী সৈন্য। তাহাদের বাদশাহের নাম তুম্মতিক। যদিও তুমিতাক অতি প্রতাপশালী তথাপি এই তরবারি প্রভূতির প্রভাবে সে তোমার বশ্যতা স্বীকার করবে। দই একদিন সেখানে থাকিয়া অগ্রসর হইও। ক্ৰমে সী-মোরগের গহে পেপছিবে। এই তরবারির প্রভাবে সেও তোমার বশ্যতা স্বীকার করিবে ও তোমার যথেষ্ট সহায়তা করিবে। তাহারই সাহায্যে তুমি নদী পার হইয়া বাকাফ দেশে পেপছিতে পারবে। সাবধান, আমি যাহা বলিলাম, ঠিক ঠিক সেই মত করবে, কোনওরপে অন্যথা না হয়।” এই বলিয়া জমিলাবান নিজ অশবশালা হইতে পবনসদৃশ বেগবান এক অশব বাজকুমারকে আনাইয়া দিলেন। রাজকুমার তখন সজিত হইয়া যাত্রা করিলেন। জমিলাবান তাঁহার বিরহক্লেশ সহ্য