পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১১০
গল্প-দশক।

পারিলে রক্ষা থাকিবে না। গিরিবালা সে কথায় কর্ণপাত করে না। তাহার মনে এখন আর কিছুমাত্র ভয় নাই।

 অভিনয় অনেক দূর অগ্রসর হইল। রাধার দুর্জ্জয় মান হইয়াছে;—সে মানসাগরে কৃষ্ণ আর কিছুতেই থই পাইতেছে না;—কত অনুনয় বিনয় সাধাসাধি কাঁদাকাঁদি—কিছুতেই কিছু হয় না! তখন গর্ব্বভরে গিরিবালার বক্ষ ফুলিতে লাগিল। কৃষ্ণের এই লাঞ্ছনায় সে যেন মনে মনে রাধা হইয়া নিজের অসীম প্রতাপ নিজে অনুভব করিতে লাগিল। কেহ তাহাকে কখন এমন করিয়া সাধে নাই; সে অবহেলিত অবমানিত পরিত্যক্ত স্ত্রী, কিন্তু তবু সে এক অপূর্ব্ব মোহে স্থির করিল যে, এমন করিয়া নিষ্ঠুরভাবে কাঁদাইবার ক্ষমতা তাহারও আছে। সৌন্দর্য্যের যে কেমন, দোর্দ্দণ্ডপ্রতাপ তাহা সে কানে শুনিয়াছে অনুমান করিয়াছে মাত্র—আজ দীপের আলোকে; গানের সুরে, সুদৃশ্য, রঙ্গমঞ্চের উপরে তাহা সুস্পষ্টরূপে প্রত্যক্ষ করিল। নেশায় তাহার সমস্ত মস্তিষ্ক ভরিয়া উঠিল।

 অবশেষে যবনিকা পতন হইল, গ্যাসের আলো ম্লান হইয়া আসিল, দর্শকগণ প্রস্থানের উপক্রম করিল। গিরিবালা মন্ত্রমুগ্ধের মত বসিয়া রহিল। এখান হইতে উঠিয়া যে বাড়ি যাইতে হইবে একথা তাহার মনে ছিল না। সে ভাবিতেছিল, অভিনয় বুঝি ফুরাইবে না, যবনিকা আবার উঠিবে, রাধিকার নিকট কৃষ্ণের পরাভব, জগতে ইহা ছাড়া আর কোন বিষয় উপ-