পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
মানভঞ্জন।
১১৯

তাহার মুখে কথা নাই, এবং তাহার মুখ ভাল করিয়া দেখাই যায় না।

 অভিনয়ের শেষাংশে মনোরমাকে পিতৃগৃহে পাঠাইয়া তাহার স্বামী অর্থলোভে কোন এক লক্ষপতির একমাত্র কন্যাকে বিবাহ করিতে উদ্যত হইয়াছে। বিবাহের পর বাসরঘরে যখন স্বামী নিরীক্ষণ করিয়া দেখিল তখন দেখিতে পাইল—এও সেই মনোরমা,—কেবল সেই দাসীবেশ নাই—আজ সে রাজকন্যা সাজিয়াছে—তাহার নিরুপম সৌন্দর্য্য, আভরণে ঐশ্বর্য্যে মণ্ডিত হইয়া দশদিকে বিকীর্ণ হইয়া পড়িতেছে। শিশুকালে মনোরমা তাহার ধনী পিতৃগৃহ হইতে অপহৃত হইয়া দরিদ্রের গৃহে পালিত হইয়াছে। বহুকাল পরে সম্প্রতি তাহার পিতা সেই সন্ধান পাইয়া কন্যাকে ঘরে আনাইয়া তাহার স্বামীর সহিত পুনরায় নূতন সমারোহে বিবাহ দিয়াছে।

 তাহার পরে বাসর-ঘরে মানভঞ্জনের পালা আরম্ভ হইল।

 কিন্তু ইতিমধ্যে দর্শকমণ্ডলীর মধ্যে ভারি এক গোলমাল বাধিয়া উঠিল। মনোরমা যতক্ষণ মলিন দাসীবেশে ঘোমটা টানিয়া ছিল ততক্ষণ গোপীনাথ নিস্তব্ধ হইয়া দেখিতেছিল। কিন্তু যখন সে আভরণে ঝলমল করিয়া, রক্তাম্বর পরিয়া, মাথার ঘোমটা ঘুচাইয়া, রূপের তরঙ্গ তুলিয়া বাসর-ঘরে দাঁড়াইল এবং এক অনির্ব্বচনীয় গর্ব্বে গৌরবে গ্রীবা বঙ্কিম করিয়া সমস্ত দর্শকমণ্ডলীর প্রতি এবং বিশেষ করিয়া সম্মুখবর্ত্তী গোপীনাথের প্রতি চকিত বিদ্যুতের ন্যায় অজ্ঞাবজ্রপূর্ণ তীক্ষ্ণ-