পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৪৪
গল্প-দশক।

 প্রথম, ইন্দ্রাণী অনেক গহনা পরিয়া অত্যন্ত সুসজ্জিত হইয়া আসিয়াছিল। মনিববাড়িতে এত ঐশ্বর্য্যের আড়ম্বর করিয়া প্রভুদের সহিত সমকক্ষতা দেখাইবার কি আবশ্যক ছিল?

 দ্বিতীয়, ইন্দ্রাণীর রূপের গর্ব্ব। ইন্দ্রাণীর রূপটা ছিল সে বিষয়ে সন্দেহ নাই, এবং নিম্নপদস্থ ব্যক্তির এত অধিক রূপ থাকা অনাবশ্যক এবং অন্যায় হইতে পারে কিন্তু তাহার গর্ব্বটা সম্পূর্ণ নয়নতারার কল্পনা। রূপের জন্য কাহাকেও দোষী করা যায় না এই জন্য নিন্দা করিতে হইলে অগত্যা গর্ব্বের অবতারণা করিতে হয়।

 তৃতীয়, ইন্দ্রাণীর দাম্ভিকতা,—চলিত ভাষায় যাহাকে বলে দেমাক্‌। ইন্দ্রাণীর একটি স্বাভাবিক গাম্ভীর্য্য ছিল—অত্যন্ত প্রিয় পরিচিত ব্যক্তি ব্যতীত সে কাহারও সহিত মাখামাখি করিতে পারিত না। তাহা ছাড়া গায়ে পড়িয়া একটা সোরগোল করা, অগ্রসর হইয়া সকল কাজে হস্তক্ষেপ করিতে যাওয়া সেও তাহার স্বভাবসিদ্ধ ছিল না।

 এইরূপ নানাপ্রকার অমূলক ও সমূলক কারণে নয়নতারা ক্রমশঃ উত্তপ্ত হইয়া উঠিতে লাগিল। এবং অনাবশ্যক সূত্র ধরিয়া ইন্দ্রাণীকে “আমাদের ম্যানেজারের স্ত্রী” “আমাদের দেওয়ানের নাত্‌নী” বলিয়া বারম্বার পরিচিত ও অভিহিত করিতে লাগিল। তাহার একজন প্রিয় মুখরা দাসীকে শিখাইয়া দিল—সে ইন্দ্রাণীর গায়ের উপর গড়িয়া পরম সখীভাবে তাহার গহনাগুলি হাত দিয়া নাড়িয়া নাড়িয়া সমালোচনা