পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
প্রতিহিংসা।
১৪৭

সামান্য কর্ম্মচারী। ইন্দ্রাণীর এখনো মনে পড়ে, বাল্যকালে একদিন নয়নতারার বাপ নয়নকে সঙ্গে করিয়া তাঁহাদের বাড়িতে আসিয়া বামাচরণের সহিত তাঁহার কন্যার বিবাহের জন্য গৌরীকান্তকে বিস্তর অনুনয় বিনয় করিয়াছিলেন। সেই উপলক্ষে ক্ষুদ্র বালিকা নয়নতারার অসামান্য প্রগল্‌ভতায় গৌরীকান্তের অন্তঃপুরে সকলেই আশ্চর্য্য এবং কৌতুকান্বিত হইয়াছিলেন, এবং তাহার সেই অকালপক্কতার নিকট মুখচোরা লাজুক ইন্দ্রাণী নিজেকে নিতান্ত অক্ষমা অনভিজ্ঞ জ্ঞান করিয়াছিল। গৌরীকান্ত এই মেয়েটির অনর্গল কথায় বার্ত্তায় এবং চেহারায় বড়ই খুসী হইয়াছিলেন কিন্তু কুলের যৎকিঞ্চিৎ ক্রটি থাকায় বামাচরণের সহিত ইহার বিবাহপ্রস্তাবে মত দিলেন না। অবশেষে তাঁহারই পছন্দে এবং তাঁহারই চেষ্টায় অকুলীন বিনোদের সহিত নয়নতারার বিবাহ হয়।

 এই সকল কথা মনে করিয়া ইন্দ্রাণী কোন সান্ত্বনা পাইল না, বরং অপমান আরও বেশী করিয়া বাজিতে লাগিল। মহাভারতে বর্ণিত শুক্রাচার্য্যদুহিতা দেবযানী এবং শর্ম্মিষ্ঠার কথা মনে পড়িল। দেবযানী যেমন তাহার প্রভুকন্যা শর্ম্মিষ্ঠার দর্পচূর্ণ করিয়া তাহাকে দাসী করিয়াছিল, ইন্দ্রাণী যদি তেমনি করিতে পারিত তবেই যথোপযুক্ত বিধান হইত। এক সময় ছিল, যখন দৈত্যদের নিকট দৈত্যগুরু শুক্রাচার্য্যের ন্যায় মুকুন্দ বাবুর পরিবারবর্গের নিকট তাহার পিতামহ গৌরীকান্ত একান্ত আবশ্যক ছিলেন। তখন তিনি যদি ইচ্ছা করিতেন