বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৫০
গল্প-দশক।

উপর বসিয়া তাঁহার গ্রীবা বেষ্টন করিয়া উত্তর করিল,“তোমার কাছ থেকে যে রকমের পাই ঠিক সে রকমের নয়।”

 তাহার পর, ইন্দ্রাণী একে একে সকল কথা বলিয়া গেল। সে মনে করিয়াছিল স্বামীর কাছে এ সকল অপ্রিয় কথার উত্থাপন করিবে না; কিন্তু সে প্রতিজ্ঞা রক্ষা হইল না, এবং ইহার অনুরূপ প্রতিজ্ঞাও ইন্দ্রাণী ইতিপূর্ব্বে কখনও রক্ষা করিতে পারে নাই। বাহিরের লোকের নিকট ইন্দ্রাণী যতই সংযত সমাহিত হইয়া থাকিত, স্বামীর নিকটে সে সেই পরিমাণে আপন প্রকৃতির সমুদয় স্বাভাবিক বন্ধনমোচন করিয়া ফেলিত-সেখানে লেশমাত্র আত্মগোপন করিতে পারি না।

 অম্বিকাচরণ সমস্ত ঘটনা শুনিয়া মর্মান্তিক ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিলেন। বলিলেন, এখনি আমি কাজে ইস্তফা দিব। তৎক্ষণাৎ তিনি বিনোদ বাবুকে এক কড়া চিঠি লিখিতে উদ্যত হইলেন।

 ইন্দ্রাণী তখন চৌকির হাতা হইতে নীচে নামিয়া মাদুরপাতা মেঝের উপর স্বামীর পায়ের কাছে বসিয়া তাঁহার কোলের উপর বাহু রাখিয়া বলিল—এত তাড়াতাড়ি কাজ নেই। চিঠি আজ থাক্‌। কাল সকালে যা হয় স্থির কোরো।

 অম্বিকা উত্তেজিত হইয়া উঠিয়া কহিলেন, না, আর এক দণ্ড বিলম্ব করা উচিত নয়।

 ইন্দ্রাণী তাহার পিতামহের হৃদয়মৃণালে একটিমাত্র পদ্মের মত ফুটিয়া উঠিয়াছিল। তাঁহার অন্তর হইতে সে যেমন স্নেহ-